Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অবশেষে জয় হলো প্রবাসী প্রেমিকের

loveআজকের আকাশটা মেঘলা। সিঙ্গাপুরে আকাশ এই সূর্য এই মেঘলা। হয়তোবা একটু পরই মেঘ জমে বৃষ্টি শুরু হবে। গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ঝড়ো বৃষ্টি আরম্ভ হলো। মাহফুজার সাথে কথা বলব এই অস্থিরতায় আমি অসুখে ভুগছি। প্রকৃতি আমাকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। আমার মনপ্রাণজুড়ে এখন শুধুই মাহফুজা।

খোলা জানালায় বৃষ্টির ছাট আমার শরীরে এসে পড়তেই কল্পরাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। তড়িঘড়ি করে জানালা বন্ধ করে দিলাম। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে আমার বেশ ভালো লাগে। কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি পথচারীরা দৌড়ে ছাউনির নিচে এসে দাঁড়াচ্ছে। কয়েকজন সিকিউরিটি রেইনকোট পরে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। কেউবা বাস থেকে নেমে ধীরে ধীরে হাঁটছে আর বৃষ্টি উপভোগ করছে।

chardike-ad

আমি আনমনে বিছানায় বসে মোবাইলটা হাতে নিলাম। ভাগনি রাতে কল দিতে বলছে কিন্তু আমার তর সইছে না। ইচ্ছে করছে তার সাথে এখনই কথা বলি। আজ কতদিন হলো তার সাথে যোগাযোগ নেই। আমার ভালোবাসা আমাকে ছেড়ে একাকি আছে৷ কেউ যখন আমাদের জীবনে আসে তখন আমরা তার মূল্য বুঝি না।

মানুষটাকে অবহেলা করি। কিন্তু যখনই জীবন থেকে মানুষটি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন আমরা তার জন্য অস্তির হয়ে উঠি। ইদানীং মনে হচ্ছে মাহফুজাকে আমি চিরদিনের জন্য হারাতে বসেছি তাই তার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠছে। তাকে হারিয়ে আমি একটুও ভালো থাকব না।

বিকেলটা নানা ভাবনায় কাটিয়ে দিলাম। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তাকে কল দেই। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ভাগনি কল রিসিভ করে বলল, মামা আন্টির সাথে কথা বলবেন। হ্যাঁ তোমার আন্টির কাছে মোবাইলটা দাও।

আমি ছোট করে বললাম, হ্যালো। ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসছে না। আবারো বললাম, মাহফুজা আমি জাহাঙ্গীর।

সাথে সাথে ওপাশ থেকে ওর কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। নিজের অজান্তে আমিও কেঁদে ফেলি। আমার বুক ধড়ফড় করছে। মনে হচ্ছে আমার দেহে প্রাণ নেই। আমি টাইম ডাইলেশনের মাহফুজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমি তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস উপলব্ধি করছি। তার শরীরের ঘ্রাণ নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে।

এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যায়। একটা সময় সে বলল, এতদিন পর আমার কথা মনে পড়ল। না মাহফুজা প্রতিটি রাত প্রতিটি ক্ষণ তোমাকে মনে পড়েছে। তাহলে কল দাওনি কেন? যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে না কেন?

আমি তোমাকে প্রায় ১০০টি চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তুমি কোনো জবাব দাওনি। তাই অভিমান করে আর যোগাযোগ করিনি।

কি বলো, আমি তোমার কোনো চিঠি পাইনি।

আমার বুঝতে বাকি রইল না। আমার বন্ধু সব চিঠি গায়েব করে দিয়ে মাহফুজার নামে আমার কাছে মিথ্যা কথা বলেছে।

তুমি তো কল দিতেও পারতে?

তোমাদের কারো নম্বর নেই। তাই দারোয়ানের নম্বরে কল দিতাম কিন্তু সে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিত।

আসলে সে কানে কম শুনে; তাই কারো কথাই পুরোপুরি না শুনে কল কেটে দেয়।

আচ্ছা তুমি কি এখনো আমাকে ভালোবাসো?

আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় বিয়ে করিনি আর তুমি জানতে চাইছো ভালোবাসি কিনা? এরপর আমাদের প্রেমটা আবার নতুন উদ্যমে এগুতে থাকে।

এরপর আর কিছু লেখা নেই। জাহাঙ্গীর কী তার ভালোবাসার মানুষ মাহফুজাকে বিয়ে করেছে? জাহাঙ্গীরের নম্বরে কল দিলাম। ওপাশ থেকে সে কল রিসিভ করে বলল, কি ব্যাপার ভাই?

আপনার আর মাহফুজার কি বিয়ে হয়েছে?

আমার কথা শুনে সে হাসছে। ভাই হাসবেন না প্লিজ বলেন৷

সে বলল, বাড়িতে সবাই আমাকে বিয়ের কথা বলত, আমি তাদের বলেছিলাম বিয়ে করব না। মা একদিন বললেন, বাবা তোর কী কোনো মেয়ে পছন্দের আছে?

আমি এই সুযোগে মাহফুজার কথা বলি। মা আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে তুই এখনো ওই মেয়েকেই ভালোবাসিস।

হ্যাঁ মা।

আচ্ছা তোর সুখের জন্য আমরা মাহফুজাকেই বউ করে আনব।

এবার মাহফুজার মা-বাবা, ভাই সবাই আমার কাছে তাকে বিয়ে দিতে রাজি। যারা আমাকে অপমান করে তাড়িয়েছে, তারাই এবার পরম শ্রদ্ধায় আমার হাতে মাহফুজাকে তুলে দেয়।

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলি, তাহলে সুখেই আছেন?

হ্যাঁ, এখন আমরা সুখেই আছি। আমাদের একটা মেয়ে হয়েছে। তাকে নিয়ে আমাদের সুখের সংসার।

আমি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভাবতে থাকি সত্যিকারের প্রেম কখনো হারিয়ে যায় না। যে একবার সত্যিকারের কাউকে ভালোবাসে সে এ জীবনে তাকে ভুলতে পারে না। হয়তো সারাজীবন সে ভুলে থাকার অভিনয় করে যায়। কিন্তু একাকি গভীর রাতে সে তার ভালোবাসার মানুষের জন্য অশ্রু বিসর্জন দেয়।

লেখক- ওমর ফারুকী শিপন, সিঙ্গাপুর থেকে