Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ডিমের বাজারে নয়া সংকট

ডিমের বাজারে অস্থিরতা কাটছেই না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে পণ্যটির দাম। এখনো প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি না করলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে আড়তদারদের বিরুদ্ধে। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় ডিম সংগ্রহ বন্ধ রেখেছে আড়তদাররা।

chardike-ad

গতকাল দুপুরে ডিমের পাইকারি বাজার তেজগাঁও ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি আড়তই বন্ধ। ডিম সংগ্রহের জন্য ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি ট্রাকগুলো। এ সময় আল-আমিন ট্রেডার্সের সাইনবোর্ডে থাকা নাম্বারে ফোন দিয়ে আড়ত বন্ধের কারণ যানা যায়। আড়তটির পরিচালক মো. আল-আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম বিক্রি করা সম্ভব না। প্রতিটি ডিম আমাদেরই কেনা পড়ছে ১৩.২ টাকা। সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ তো আছেই। তাহলে আমরা কীভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে অর্থাৎ ১১.০১ টাকায় বিক্রি করবো এই দামে ডিম বিক্রি করলে আমাদের ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ক্ষতি হবে। এজন্য আজ আড়ত বন্ধ ছিল। ডিম আনতে গাড়ি পাঠানো হয়নি। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামীকালও গাড়ি পাঠানো সম্ভব হবে না। এতে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যাবো। সার্বিক বিষয়ে তাদের অবহিত করবো।

এর আগে ১৫ই সেপ্টেম্বর উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। যদিও এ সময় ডিমের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম ছিল। তবে বেশি করে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও শুরু থেকেই তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। অন্যদিকে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

ডিমের উৎপাদন তথ্যে গরমিল:

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দৈনিক ডিমের চাহিদা ৫ কোটি পিস। পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাবে, দেশে দৈনিক ডিমের উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি পিস। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ৫০ লাখ পিস ডিমের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে উৎপাদন নেমেছে ৪ কোটিতে। অন্যদিকে ভারত থেকে আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে সাড়ে চার কোটি। অর্থাৎ ভারত থেকে আনা ডিমে চলবে মাত্র একদিন। তবে ডিমের উৎপাদনের ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ডিমের দৈনিক উৎপাদন ৬ কোটি ৩০ লাখ পিস। এখান থেকে ৫০ লাখ পিস উৎপাদন কমে ৫ কোটি ৮০ লাখ পিসে নামলেও তা দৈনিক চাহিদার তুলনায় বেশি বলে জানান কর্মকর্তারা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে।

এর আগের অর্থবছর ২০২২-২৩ ডিম উৎপাদন হয়েছিল ২ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৩ লাখ পিস। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত বছর দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন ১২.৭ গ্রাম করে ডিম ভোগ করেছে। ফলে দৈনিক ডিমের ভোগ দুই হাজার টনের কাছাকাছি। আর বছরে ডিমের উৎপাদন দেখানো হচ্ছে দুই হাজার ৩৭৫ কোটি পিস। ফলে দৈনিক ডিমের উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ছয় কোটি পিসের বেশি। প্রতিটি ডিমের ওজন ৬০ গ্রামের নিচে ধরা হলে দৈনিক ডিমের উৎপাদন ছাড়ায় তিন হাজার টনের বেশি। ফলে উৎপাদনের সঙ্গে ভোগের তথ্যের ব্যাপক ফারাক রয়েছে।

ট্রাক থেকে নামতেই ৭ বার হাতবদল, সবজির দাম বাড়াচ্ছে ১২০০ ফড়িয়া ব্যবসায়ী:

কাওরান বাজারের ট্রাক থেকে সবজি নামানোর পর ৬ থেকে ৭ বার হাতবদল হয়। প্রত্যেকবার হাতবদলে বাড়ানো হচ্ছে দাম। এরসঙ্গে জড়িত ১২০০ ফড়িয়া ব্যবসায়ী। যাদের কোনো লাইসেন্স নেই। তারা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো রশিদ দেয় না। এই সুযোগে আড়তদারদের যোগসাজশে পাইকারি, ব্যাপারী, খুচরা ব্যবসায়ী সবাই মিলেমিশে বাড়াচ্ছে পণ্যের দাম। শনিবার কাওরান বাজারে অভিযানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

অভিযান পরিচালনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাওরান বাজারে সবজির ট্রাক রাত ১২টায় আসে এবং ট্রাক থেকে ৬ থেকে ৭ বার হাতবদল হয়ে পাইকারি পর্যায়ে পৌঁছায়। সেখানে অবৈধ ফড়িয়া ব্যবসায়ী আছে প্রায় ১২০০ জন, যাদের কোনো লাইসেন্স, রশিদ বই এবং স্টক রেজিস্টার নেই। অভিযানে উঠে আসে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং আড়তদারদের যোগসাজশে পাইকারি, ব্যাপারী, খুচরা ব্যবসায়ী সবাই একত্রে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে।

সূত্র: মানবজমিন