ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে শোচনীয় হারের পর দলে বড় পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান। শেষ দুই ম্যাচের দল থেকে বাবর আজম, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহকে বাদ দিয়েছে তারা। সাম্প্রতিক ফর্ম ও ফিটনেস বিবেচনায় এই তিন তারকাকে ছাড়াই দল সাজানোর কথা জানিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ দুই টেস্টের জন্য রোববার ১৬ জনের দল ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা কামরান ঘুলাম, হাসিবুল্লাহ ও মেহরান মুমতাজকে দলে ডেকেছে তারা। বাবর, আফ্রিদি ও নাসিমের বাদ পড়া অবশ্য অভাবনীয় কিছু নয়। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
পাকিস্তানের সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর দুই বছর ধরে সাদা পোশাকে ছন্দে নেই। এই সংস্করণে সবশেষ ১৮ ইনিংসে একবারও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি সাবেক এই অধিনায়ক। ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস তার ব্যাট থেকে শেষবার এসেছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১ রান করেছিলেন তারকা এই ক্রিকেটার।
অভিজ্ঞ পেসার আফ্রিদিও দীর্ঘ দিন ধরে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। বিশেষ করে ২০২৩ সালে চোটে পড়ার পর থেকে নিজেকে খুঁজে ফিরছেন বাঁহাতি এই পেসার। গত বছরের শুরু থেকে ১১ ইনিংসে ১৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি ৪৫.৪৭ গড়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে হারা সবশেষ টেস্টে ২৬ ওভারে ১২০ রান দিয়ে ১ উইকেট নিতে পারেন তিনি। আফ্রিদির বলের গতি যেমন কমেছে, তেমনি নতুন বলের প্রভাবও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সঙ্গে তার ফিটনেস নিয়ে উদ্বেগ তো আছেই। সব মিলিয়ে এনিয়ে টানা তৃতীয় সিরিজে সব ম্যাচ খেলতে পারলেন না তিনি।
২০১৯ সালে অভিষেকের পর টেস্টে যে ঝলমলে পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছিলেন নাসিম, সেটার পুনরাবৃত্তি করতে এখন লড়ছেন তিনি। শুরুতে তাকে বিশেষজ্ঞ টেস্ট বোলার হিসেবে বিবেচনায় রেখেছিল পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখার প্রথম তিন বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে তাকে খেলায়নি দল। পরে সাদা বলেও অভিষেক হয়ে যায় নাসিমের। ২০২৩ সালে এশিয়া কাপে কাঁধে চোট পাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করাতে হয় তার। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার পর গত এপ্রিলে আবার ফেরেন তিনি। কিন্তু তার সেই আগের গতি এখন আর দেখা যায় না। বোলিংয়ে নেই চেনা ধারও।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৩১ ওভারে ১৫৭ রান দিয়ে ২ শিকার ধরা নাসিমের বাদ পড়ার পেছনে বয়ে বেড়ানো কোনো চোটের ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথম টেস্টের দল থেকে ছেড়ে দেওয়া দুই স্পিনার নোমান আলি ও জাহিদ মাহমুদকে আবার ফিরিয়েছে পাকিস্তান। সঙ্গে আরেক স্পিনার সাজিদ খানকে ফেরানো হয়েছে দলে।
একটি ওয়ানডে খেলা কামরান এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৫৯টি। ৪৯.১৭ গড়ে রান করেছেন ৪ হাজার ৩৭৭। নামের পাশে সেঞ্চুরি ১৬টি ও ফিফটি ২০টি। বাঁহাতি স্পিনেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি। লাল বলে ধরেছেন ২৮ শিকার।
হাসিবুল্লাহ পেয়েছেন দেশের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি খেলার স্বাদ। এবার টেস্টের আঙিনায় পা রাখার অপেক্ষা এখন পর্যন্ত ২১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা এই কিপার-ব্যাটসম্যানের। এই সংস্করণে ৩৮.৪৫ গড়ে তার রান ৯২৩, সেঞ্চুরি আছে ৪টি।
মেহরান এখনও পাননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ। এখন পর্যন্ত ১৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা এই বাঁহাতি স্পিনার ধরেছেন ৫৪ শিকার। দুইবার পেয়েছেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট, চারটি একবার। ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে তার একবার।
আগামী মঙ্গলবার শুরু হবে পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্ট। মুলতানে প্রথম টেস্টের পিচেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ম্যাচটি। দুই দলের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট হবে রাওয়ালপিণ্ডিতে, শুরু আগামী ২৪ অক্টোবর।
ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টের পাকিস্তান দল: শান মাসুদ (অধিনায়ক), সাউদ শাকিল (সহ-অধিনায়ক), আমের জামাল, আবদুল্লাহ শাফিক, হাসিবুল্লাহ (উইকেটরক্ষক), কামরান ঘুলাম, মেহরান মুমতাজ, মির হামজা, মোহাম্মদ আলি, মোহাম্মদ হুরাইরা, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), নোমান আলি, সাইম আইয়ুব, সাজিদ খান, সালমান আলি আঘা ও জাহিদ মাহমুদ।