তিন বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখাচ্ছে বৈশ্বিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। প্রচলিত ইন্টারনেট–সেবা মুঠোফোন টাওয়ার ও সাবমেরিন কেব্লনির্ভর হলেও স্টারলিংক কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট–সেবা দেয়। এ কারণে পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চলেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বিশ্বের প্রায় ৫০টির বেশি দেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম রয়েছে।
গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি এনে পরীক্ষা করা হয়। সে সময় তৎকালীন মন্ত্রীদের সঙ্গে স্টারলিংকের বৈঠকও হয়েছিল।
সম্প্রতি স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স দিতে আগ্রহী সরকার। তাই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তাদের ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার একটি খসড়া গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।
বিটিআরসি প্রকাশিত প্রস্তাবিত গাইডলাইনটির নাম হচ্ছে, ‘নন–জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর’। আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই গাইডলাইনের ওপর মতামত দেওয়া যাবে।
প্রস্তাবিত গাইডলাইনে যা রয়েছে
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ করতে এনটিএমসি বা বিটিআরসিকে তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লাইসেন্সধারীর সিস্টেমে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি থাকতে হবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এনটিএমসিকে প্রয়োজন অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত গেটওয়েতে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। লাইসেন্সধারী এনটিএমসিকে আড়িপাতার সিস্টেমে যেকোনো প্রয়োজনীয় ডেটা প্রদানের ব্যবস্থা রাখবে।
নাশকতামূলক বা বেআইনি কার্যকলাপ শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবে কমিশন। সময়ে সময়ে কমিশনের কাছে প্রাসঙ্গিক তথ্য জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেবে। ধ্বংসাত্মক বা বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত এমন সাবস্ক্রিপশন থাকলে তা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা থাকতে হবে লাইসেন্সধারীর।
লাইসেন্সধারী বিটিআরসি ও এনটিএমসির নির্দেশনা অনুযায়ী ইন্টারনেট প্রোটোকল ডিটেইল রেকর্ড (আইপিডিআর), লেনদেনের বিস্তারিত রেকর্ড (টিডিআর), কল ডিটেইলড রেকর্ড (সিডিআর) এক বছরের জন্য সংরক্ষণ করবে।
আইনানুগ আড়িপাতার পদ্ধতি থাকতে হবে এবং সরকারের এ–সংক্রান্ত নীতি মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া কমিশন জাতীয় নিরাপত্তা বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সহ বেশ কিছু কারণে লাইসেন্সধারীকে পূর্ব নোটিশ ফ্রিকোয়েন্সির নিয়োগ বাতিল করতে পারবে।
লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে টেলিকম আইন ২০০১, ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন ১৯৩৩, টেলিগ্রাফ আইন ১৮৮৫, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ (পরিবর্তিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩) মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া কমিশন দ্বারা সময়ে সময়ে আদেশ, নীতি, সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া সরকারের সংসদ দ্বারা যে কোনো অধ্যাদেশ, রুলস ও নীতি মেনে চলতে হবে।
উল্লেখ্য, ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস করে। সে আইন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হবে।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট–সেবা হলেও দেশের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ব্যান্ডউইডথ নিতে হবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য লাইসেন্সধারীর গেটওয়ে আইআইজির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারী সেবা দেওয়ার আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে অন্তত একটি গেটওয়ে সিস্টেম স্থাপন করবেন। তবে কমিশন লাইসেন্সধারীকে বাড়তি গেটওয়ে স্থাপন করতে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যবহারকারীর কার্যক্রম ও পরিবেশন এই দেশের স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে হতে হবে।
এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, দেশের ভেতরে এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট–সেবা মূলত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) মতোই হবে। দেশে তাকে আইআইজি থেকেই ব্যান্ডউইডথ নিতে হবে। সরকারের এই নীতি অনুসরণ করলে পুরো দেশে যদি ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, তবে স্যাটেলাইটে ইন্টারনেট দিয়েও কাজ হবে না।