শনিবার । ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
সেতু ইসরাত বিজনেস ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:২৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

জামদানি ফিউশন নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মেঘনা


Meghna 1

ফিউশন চিন্তার ফসল হিসেবে ঢাকাই জামদানি দিয়ে তিনি তৈরি করছেন ১০০টিরও বেশি বৈচিত্র্যময় পণ্য

​জামদানির প্রতি ভালোবাসা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার সংমিশ্রণে বাংলাদেশের জামদানি শিল্পকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন উদ্যোক্তা লুৎফুন্নেসা মেঘনা। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক আবহে জামদানির প্রতি যে গভীর অনুরাগ সৃষ্টি হয়েছিল, পরবর্তীতে সেটাই তার উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। ইডেন মহিলা কলেজে পড়াশোনা ও ব্যাংকে চাকরির পর, কন্যাসন্তান রাফিয়াকে ঘিরেই তার স্বপ্নের উদ্যোগ “রাফিয়া ফ্যাশন হাউজ”-এর যাত্রা শুরু হয়।

​লুৎফুন্নেসা মেঘনার মূল লক্ষ্য ছিল জামদানিকে কেবল শাড়ির গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা। তার এই ফিউশন চিন্তার ফসল হিসেবে ঢাকাই জামদানি দিয়ে তিনি তৈরি করছেন ১০০টিরও বেশি বৈচিত্র্যময় পণ্য, যার মধ্যে রয়েছে জুট ফাইল, জামদানি হ্যান্ড পার্স, ল্যাপটপ ব্যাগ, অর্নামেন্টস বক্স, টোট ব্যাগ, জুতা, গহনা এবং টিস্যু বক্সসহ বিভিন্ন আইটেম।

Meghna 3

নিয়মিতভাবে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার পণ্য যাচ্ছে

​তার এই উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা সম্প্রতি তাকে আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দিয়েছে। দেশের বাইরে পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বড়সড় মাইলফলক স্থাপন করে, এবারের ১২ তম জাতীয় এসএমই মেলা থেকে তিনি কেবল আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকেই প্রায় ২০ লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছেন। ​এবারের মেলায় আসা উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক অর্ডারগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রেলিয়ার ​মেলবোর্ন থেকে বিশেষভাবে চাওয়া হয়েছে ৩৫০ পিস ঢাকাইয়া জামদানির ব্রিফকেস। নিউইয়র্কের ক্রেতারা অর্ডার করেছেন ২০০ পিস কয়েন পার্স এবং টিন এজদের জন্য ১৫০ পিস পার্টি পার্স। ​একই সাথে নিউইয়র্ক থেকে ১০০০ পিস চাবির রিং-এর অর্ডার এসেছে।

​এছাড়াও, নিয়মিতভাবে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার পণ্য যাচ্ছে। দেশের ভেতরেও গড়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ পিস করে পণ্যের অর্ডার পাচ্ছেন এই উদ্যোক্তা।

​নিজের সামান্য পুঁজি দিয়ে শুরু করা এই উদ্যোগের সফলতার পেছনে মেঘনার দৃঢ় প্রত্যয় এবং পারিবারিক সহযোগিতা ছিল প্রধান নিয়ামক। উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের জন্য পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে মেঘনা বলেন, ‘প্রতিটি কাজই পরিশ্রমের, তবে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিটি নারীরই উচিত তার মেধাকে কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করা। তিনি মনে করেন, ভালো কাজে শত বাধা-বিপত্তি আসতে পারে এবং নারী হয়ে কিছু করতে গেলে সমাজ-সংসারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। তবে স্বামীসহ পরিবারের সবার পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়ায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা তার জন্য সহজ হয়েছে।’

Meghna 2

লুৎফুন্নেসা মেঘনা বিশ্বাস করেন, দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করলে সফলতা আসবেই।

​ঢাকাই জামদানির ঐতিহ্যকে আধুনিক ফিউশন পণ্যের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে লুৎফুন্নেসা মেঘনা প্রমাণ করেছেন, সঠিক ভাবনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকেও আন্তর্জাতিক বাজারে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।