আজম মাহমুদ, ৩ জুলাই ২০১৪:
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক সুন্দর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে ব্রাজিলের দ্বিতীয় রাউন্ডে। কোনো ধরনের অঘটন ছাড়াই গ্রুপ পর্বের আট চ্যাম্পিয়নই উত্তীর্ণ হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। বিদায় নিয়েছে আট গ্রুপের রানার্সআপরা। আট গ্রুপ সেরাদের টিকে থাকাটা বিশ্বকাপের মান ও আকর্ষণকে অটুট রাখবে।
গ্রুপ পর্বে তিন সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেন, ইতালি ও ইংল্যান্ডের লজ্জাজনক ব্যর্থতায় বিস্মিত হয়েছে সবাই। নকআউট পর্বে জীবিত থেকেছে চার সাবেক চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা ও জার্মানি এবং সাবেক রানার্সআপদের একটি দল নেদারল্যান্ডস। অঘটনটা বিশ্বকাপের অলঙ্কার। আগের ১৯টি বিশ্বকাপে অঘটন ঘটেছে বেশুমার। অমিত শৈর্য, শৈলী ও শক্তির সুষম সমাবেশে প্রতিটি বিশ্বকাপেই ডার্কহর্স হিসেবে আবির্ভূর্ত হয়েছে কোনো না কোনো দল। চমৎকৃত হয়েছে বিশ্বময় ফুটবল অনুরাগী এসব দলের অখ্যাত-অজ্ঞাত সব প্রতিভার উজ্জ্বল দ্যুতিতে।
অনেক অঘটন ঘটিয়েছে পূর্ব ইউরোপীয় দল-পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও যুগোসস্নাভিয়া- বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপে একাধারে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে সারা পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্বের পিলে চমকে দিয়েছিল কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া। প্রতিভাদীপ্ত তুরস্কের তারকা নেক মতিনের অবদানে পঞ্চাশ দশকে বিশ্বকাপে সমিহ জাগানো খেলা দেখিয়েছিল তুরস্ক। ২০০২ বিশ্বকাপে নেক মতিনের আরেক যোগ্যতম উত্তরসূরি হাকান সুকের কুলীনদের তছনছ করে তৃতীয় করেছিলেন তুরস্ককে। সেবারই বিশ্ব দেখল সেনেগালের হাজী এল দিউফের ব্যাকহিলের জাদু। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ডার্কহর্স ছিল রজার মিলারের ক্যামেরুন। মেঙ্েিকাও ডার্কহর্স হয়ে ওঠে মাঝে মধ্যে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে অঘটন না ঘটলেও হৃদয় ভেঙেছে অনেক ফুটবলভক্তের। অ্যালেক্সি সানচেজের চিলির টাইব্রেকারে বিদায়, শেষ মিনিটের গোলে মেক্সিকো ও আলজেরিয়ার বিদায় এবং নাইজেরিয়ার প্রতিরোধ শেষের দিকে পথ হারানোতে ব্যথিত হন অনেক ফ্যান।
প্রথম পর্বে এশিয়া অঞ্চলের চার দল বিদায় নিয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বে বিদায় নেয় আফ্রিকার শেষ দুই প্রতিনিধি নাইজেরিয়া ও আলজেরিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল শিক্ষা পেয়েছে নেইমারের ওপর একক নির্ভরতার কারণে। স্কোলারি বুঝেছেন কাকা, রোনালদিনহো ও রোবিনহোর মতো অভিজ্ঞদের তাড়িয়ে দিয়ে অতিতরুণ দল গড়ার সমস্যাটা। ব্রাজিলের পরিণতি দেখে আর্জেন্টিনার কোচ সাবেলা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মেসির ওপর একক নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমিয়ে বিকল্প আক্রমণ মহাসড়ক তৈরির প্রয়োজনীয়তাটা অনুভব করেন। তরুণ ডি মারিয়া এখন সে বিকল্প মহাসড়কের তৎপর কর্ণধার।
অত্যুজ্জ্বল প্রতিভার গন্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন উরুগুয়ের ম্যাচজয়ী নায়ক সুয়ারেজ। তার বিদায়ে ও আহত রাদামেল ফ্যালকাওর অনুপস্থিতিতে পন্ডিত উরুগুয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে কলম্বিয়ার কাছে হেরে। মেসি, নেইমার, পার্সি ও রোবেনরা শিরোনাম পেলেও দ্বিতীয় রাউন্ডের নায়ক ছিলেন ছয় গোলরক্ষক যুক্তরাষ্ট্রের টিম হাওয়ার্ড, মেক্সিকোর গুইলেরমো ওচোয়া, ব্রাজিলের হুলিও সিজার, জার্মানির ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, কোস্টারিকার কেইলর নাভাস ও সুইজারল্যান্ডের ডিয়েগো বেনাগলিও। তাদের কেউ দলকে নিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে, কেউ ফিরে গেছেন জাতীয় নায়ক হয়ে মহাসম্মানে দেশে। আলোকিত বাংলাদেশ।