ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক হিন্দু পুরোহিতের বসতবাড়িতে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী সন্তোষ ভট্টাচাৰ্য্য।
হামলায় অভিযুক্তরা হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মনির হোসেন, মো. সানোয়ার হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম, শামিম হোসেন ওরফে বাবু, মো. রকি, মো. জুয়েল, কানন বালা সরকার, দিপক মণ্ডল, দিলিপ মণ্ডলসহ অজ্ঞাত চার-পাঁচজন। তারা সবাই সাভারের আশুলিয়ার মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা। সত্তরোর্ধ্ব সন্তোষ ভট্টাচাৰ্য্য একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় পুরোহিত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী আশুলিয়ার বাঁশবাড়ী মৌজায় সিএস এবং এসএ নম্বর ৫২৫, ৫২৬, আরএস নম্বর ৬২৫, ৬২৬ দাগে ৪৩ শতাংশ জমিতে মালিকানাধীন সূত্রে বাড়ি করে বসবাস করছেন। অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়ি ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে। এরই জেরে গত ১২ ডিসেম্বর দেশীয় অস্ত্রসহ তারা ভুক্তভোগীর বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তার গোয়ালঘর ভাঙচুর করে ও বাড়ি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার নগদ টাকা এবং প্রায় ১ লাখ টাকা মূল্যমানের গাছ কেটে নেয়। এ সময় তারা ভুক্তভোগীর ঘর ভাঙচুর করে এবং তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়। এ ঘটনার জেরে আতঙ্কে দিন পার করছে পরিবারটি।
জাহাঙ্গীর আলমের নথি ও তার দাবি মতে, সিএস মালিক ছিলেন সারদা দেবী। পরে তার মেয়ে কৈলাশ দেব্যা এ জমির মালিক হন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। এ কারণে দত্তক নেন তার ভাশুরের ছেলে অমূল্য চন্দ্র চক্রবর্তীকে। এই অমূল্য চন্দ্র চক্রবর্তীর দুই ছেলে দুলাল চন্দ্র চক্রবর্তী ও সুভাস চন্দ্র চক্রবর্তীর কাছ থেকে জাহাঙ্গীর আলম ১১৭ শতাংশ জমি কিনে নেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৈলাশ কামিনী দেব্যা আমৃত্যু আকালী কুমার চক্রবর্তীর পরিবারের কাছেই ছিলেন।
এদিকে আরএস রেকর্ড সংশোধনের আর্জি জানিয়ে সন্তোষ ভট্টাচার্য্য ঢাকার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেছেন। তিনি বলছেন, এই মামলা নিষ্পত্তি হলেই আরএস ও বিএসে তিনি মালিকানা পাবেন। তার পূর্বসূরিরা অন্তত ১৯০০ সালের শুরু থেকে জমির মালিকানাধীন। আর বিবাদী যে মালিকানা দাবি করছেন ও রেকর্ডভুক্ত হয়েছেন, সেটি মূলত কৈলাশ কামিনী দেব্যা জীবিত থাকাকালে যে ৬০ শতাংশ জমি বিক্রি করেছিলেন, সেখান থেকে।
সন্তোষ ভট্টাচার্য্য বলেন, আমার কর্তা (কৈলাশ কামিনী দেব্যা), আমার বাবা ও এখন আমার ভাইরা জমি ভোগদখল করছি। তারা জোর করে এই জমি দাবি করছে। আর এত বছর দখলে আসার চেষ্টা করেনি। গত ৫ আগস্টের পর তারা জমি দাবি করছে।
এদিকে হামলার জেরে আতঙ্কিত পরিবারটি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরোহিতের বসতবাড়ির পাশে উঠানে জমি দখল করে বালু ভরাট করা হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে রাতারাতি টিনের একটি ছোট্ট কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পুরোহিতের বসতবাড়িতে দেখা মেলে ভাঙচুরের প্রমাণ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি কারও গাছপালা কাটিনি, কারও গোয়ালঘরও ভাঙিনি। কাউকে কোনো হুমকি-ধমকিও দিইনি। আমি এই জায়গাটিতে দুই মাস আগে বালু ফেলেছি। কাগজে-কলমে এটি আমার জায়গা।’
বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও জায়গা দখলের বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’