Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘যদি প্লেনটা ভেঙে পড়ে, কি হবে মা?’

migel_plan_crashমায়ের কাছে গিয়ে এগারো বছরের ছেলে মিগুয়েলের আবদার, “তোমায় একটু জড়িয়ে ধরি?” হেসে ছেলেকে জড়িয়ে শান্ত করলেন সামিরা কালের। কয়েক দিন ধরে এই চলছিল। কখনও প্রশ্ন, আমি মরে গেলে কী হবে? কখনও আবার জিজ্ঞাসা, আমার আত্মার কী হবে তখন? ছেলের উদ্ভট প্রশ্নে কান না দিয়ে পরের দিন সকালে শিপোল বিমানবন্দরে গিয়ে বড় ভাই শাকার সঙ্গে মিগুয়েলকে তাদের মা তুলে দিয়েছিলেন এমএইচ ১৭-য়। বালিতে পৌঁছে দাদীর সাথে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা ছিল কালের পরিবারের। বিমানের টিকিট সবার একসঙ্গে জোটেনি। তাই ছেলেদের আগে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। সেই আগে পৌঁছনো আর হল না। ছেলেটাকে নিজেই জোর করে পাঠানোয় গুমরে মরছেন সামিরা।

এমনিতে সদাহাস্যময় মিগুয়েল এ বারের বেড়াতে যাওয়া নিয়ে একদম উৎসাহী ছিল না। কিছুতেই ওকে বুঝিয়ে রাখতে পারছিলেন না সামিরা। প্লেনে ওঠার আগের দিন ফুটবল খেলতে খেলতেও মিগুয়েল আচমকা বলে উঠছিল, “তুমি কিভাবে মরতে চাও মা?” একবার বলেছিল, “আমাকে কবর দেওয়ার পর কী হবে?” তারপরেই প্রশ্ন, “আমাদের আত্মা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছলে আমাদের কী হয়?” যাত্রার আগের রাতটা মাকে জড়িয়েই ঘুমিয়েছিল মিগুয়েল। পরের দিন সামিরা আর তাঁর বন্ধু আন ছেলেদের নিয়ে ট্রেনে রওনা দেন বিমানবন্দরের পথে। মিগুয়েলের দাদা শাকার বয়স ১৯। কলেজে প্রথম বছর পার করেছে সে। মাকে বলেছে, মিগুয়েলের জন্য চিন্তা কোরো না। ওকে আমি দেখব।

chardike-ad

migel with motherবিমানবন্দরে পৌঁছে মালপত্রের ঝামেলা মিটিয়ে শুল্ক দফতরের বাইরে দাঁড়িয়েছিল সবাই। ছেলেরা মাকে একবার জড়িয়ে ধরে রওনা দিয়েছিল পাসপোর্ট কাউন্টারের দিকে। ওদের যেতে দেখছিলেন সামিরা। হঠাৎ মিগুয়েল পিছন ফিরে এক ছুটে চলে আসে মায়ের কাছে। আবারও জড়িয়ে ধরে হাত দু’টো। বলে, “মা তোমায় খুব মিস করব! যদি প্লেনটা ভেঙে পড়ে, কী হবে?” সামিরা ছেলের প্রশ্নে অবাক। সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “ও কথা বলতে নেই। সব ঠিকঠাক হবে।” এই সময় এগিয়ে আসে মিগুয়েলের দাদা শাকা। মাকে বলে, “তুমি ওর জন্য ভেবো না।”

ওই শেষ কথা। দুই ছেলেকে ধীরে ধীরে দৃষ্টিপথ থেকে মিলিয়ে যেতে দেখলেন সামিরা। মিগুয়েলটা যাওয়ার পথেও ফিরে ফিরে দেখছিল মাকে। ছেলেদের তুলে দিয়ে শাকার জন্য মোজা কিনতে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যাগ গোছানোর সময় ও আবার মোজা নিতে ভুলে গিয়েছিল। তখনই সামিরাকে খবরটা দিলেন বন্ধু আন। ফোনে চিৎকার করে বললেন, “কোথায় তুমি? কী করছ? এমএইচ ১৭ ক্র্যাশ করেছে!” তার পর থেকে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে সামিরার মাথায়, ছেলেটা আগে থেকে কী করে বুঝল? এখন শুধু বিড়বিড় করছেন, “ওর কথা কেন শুনলাম না। ওর কথা শোনা উচিত ছিল আমার…।”

 

আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে