Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশ সফর করবেন চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বাশেলেট

অপার সম্ভানায় নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সাথে চিলির দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের। দক্ষিণ আমেরিকায় স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অর্থনীতি সমৃদ্ধ দেশ চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বাশেলেট কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করবেন, এই প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন। গত ৫ বছর ধরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশ চিলি ও পেরুর দায়িত্বেও আছেন এই হাই প্রোফাইল শিক্ষাবিদ ও কূটনীতিক।

২৫ জুলাই শুক্রবার এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন বলেন, চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বাশেলেটের সাথে আগে থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো এবং চলতি বছর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর সহসাই বাংলাদেশ সফর করার ব্যাপারে আন্তরিক আগ্রহের কথা তাঁকে জানিয়েছেন বাশেলেট। প্রফেসর মোমেন এলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গ্রাউন্ডওয়ার্ক সম্পন্ন করছেন এবং আশা করা হচ্ছে আসছে ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই প্রথমবারের মতো চিলির কোন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করবেন।

chardike-ad

unnamed (1)মিশেল বাশেলেটের আসন্ন সফর চিলির সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্কে বিশেষ মাইলফলক হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন। ২০০৬-১০ প্রথম মেয়াদে চিলির প্রেসিডেন্ট ছিলেন মিশেল বাশেলেট। দেশটির প্রথম নারী হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে যোগ দেন জাতিসংঘে। নারীর ক্ষমতায়ণ ও সমঅধিকার বিষয়ক বিশেষ কমিশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন টানা ৩ বছর। নিউইয়র্কে কর্মস্থল হবার সুবাদে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঘিরে মিশেল বাশেলেটের আগ্রহের সূচনাটা সেখান থেকেই।

চিলির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সব মিলিয়ে বিগত বছরগুলোতে জাতিসংঘে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুবাদেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পক্ষে সম্ভব হয়েছে চিলির প্রেসিডেন্টের আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করা। সান্টিয়াগোতে বাংলাদেশ দূতাবাস বা ঢাকায় চিলির দূতাবাস না থাকলেও দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি বানিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর শুধু গার্মেন্টস সামগ্রীই আসছে ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ওপর।

আরএমজি ছাড়াও মিলিয়ন ডলারের পাটজাত পন্যও বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় প্রতিবছর চিলিতে। এখানেই শেষ নয়। দেশটির বিভিন্ন শহরের দোকানগুলোতে একটু ঘুরে দেখলেই যে কেউ খুঁজে পাবেন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ জুতো, সিরামিক সামগ্রী, প্লাস্টিক টেবিল ওয়্যার ও ফুট ওয়্যার। বাংলাদেশি প্রোডাক্টের দারুন চাহিদা চিলিতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে তৈরী এতোসব রকমারি পন্যসামগ্রী কিন্তু বাংলাদেশিরা আমদানি করছে না চিলিতে, করছে ভারতীয়রা এবং এসবের বিপনন ও বিক্রিতেও তারাই।

রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তৈরী মেডিসিনেরও উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। চিলির সব ঔষধ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং তা এখানকার জনগণের জন্য অনেক ব্যয়বহুল। চিলির ঔষধের বাজারে প্রবেশ করতে হলে দেশটির ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক অনুমোদনের প্রয়োজন হবে বাংলাদেশি প্রোডাক্টের। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে চিলির এই সেক্টরটিকে টার্গেট করে উদ্যোগ নেবার এখনই সময় বলে মনে করেন চিলির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশি এই কূটনীতিক।

ভৌগলিকভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে উত্তর থেকে দক্ষিণে লম্বালম্বি এক বিস্তির্ণ পাহাড়িয়া জনপদ এই চিলি। উঁচু-নিচু স্থলভাগ এড়িয়ে তাই উপকূল ধরে সমুদ্র পথেই লাখ লাখ টন পন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পরিবহন করতে হয়। চিলির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষীয় সূত্রের বরাদ দিয়ে প্রফেসর এ কে আবদুল মোমেন এই প্রতিবেদককে জানান, জাহাজ নির্মান শিল্পে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ চাইলে খুব সহজেই চিলির বাজারটিও ধরতে পারে।

বাংলাদেশে তৈরী বার্জ চিলির শিপিং জগতে আকৃষ্ট হতে পারে সহজেই, যা তাদের প্রয়োজন পড়ে খুব বেশি। রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন মনে করেন, গার্মেন্টস ও জুট প্রোডাক্টের পাশাপাশি বাংলাদেশের মেডিসিন ও শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য চিলির বিশাল বাজার সুনিশ্চিতভাবে পেতে ঢাকার এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমএইএ সহ বিজনেস চেম্বারগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, চিলিতে ভারতীয়রা যেটা করছে, ওদের বিজনেস চেম্বারসমূহের তরফ থেকে চিলির আমদানিকারকদের প্লেন টিকিট দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিজনেস চেম্বারগুলো চাইলে দু’চারটি টিকেট দিয়ে চিলির সংশ্লিষ্ট লোকদের বাংলাদেশে নিয়ে আসুক, এমন পরামর্শ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেনের।

দেশটির আইটি সেক্টরেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। চিলিতে উচ্চশিক্ষা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এখানকার ছেলে-মেয়েরা উল্লেখযোগ্য হারে ইদানিং ভারতে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য। চিলির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে ইতিমধ্যে কথাও বলেছেন একসময় পৃথিবীর নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ড. মোমেন। তিনি বলেন, চিলির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও হতে পারে উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্য। এদিকে প্রবল ভূমিকম্পপ্রবন দেশ চিলি। রাজধানী সান্টিয়াগো বিশ্বের অন্যতম দূষিত রাজধানী হওয়ায় বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও চিলির সাথে বাংলাদেশ একযোগে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন প্রফেসর মোমেন।

প্রেসিডেন্ট মিশেল বাশেলেটের আসন্ন ঢাকা সফরে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্কে আরো নতুন নতুন দুয়ার খুলে যাবে, এমনটাই আশাবাদ রাষ্ট্রদূতের। প্রণিধানযোগ্য একটি বিষয় এক্ষেত্রে উল্লেখ করতেই হয়, জাতিসংঘের মতো বিশাল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিউইয়র্কে বসে সুদূর পেরুতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সময় বের করার সুযোগ কতটা রয়েছে, তা ২০১৪ সালের প্রেক্ষাপটে আজ নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। চিলির সাথে অপার সম্ভাবনার আজকের এই সীমিত পথচলায় রাষ্ট্রদূত ড. মোমেনের অবদান নিঃসন্দেহে অপরিসীম, কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এখনই নড়েচড়ে বসার সময় হয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

নিউইয়র্কের স্থায়ী মিশন থেকে চিলির জন্য সময় ও সুযোগের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি ড. মোমেন নিজেই স্বীকার করেন এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে। বিষয়টি ইতিমধ্যে তিনি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেনও। সবকিছু বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব কাছের বাংলাদেশ দূতাবাস তথা ব্রাজিল থেকে চিলি ও পেরু দেখা হলে বাংলাদেশই লাভবান হবে বলে জানান প্রফেসর মোমেন। তবে প্রেসিডেন্ট মিশেল বাশেলেটের ঢাকা সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সান্টিয়াগোতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকায় চিলির দূতাবাস প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও উঠে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক মহল।