Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘প্রলোভনে পড়ে গুড়োদুধের পক্ষে কথা বলবেন না’

sheikh_hasina_pmপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদেরকে জন্য গুড়োদুধ খাওয়ানোকে নিরুৎসাহিত করে মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুকে গুড়োদুধ খাওয়ানো নিরুৎসাহিত করতে হবে। এজন্য আমি সকল স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের আহ্বান জানাবো, আপনারা শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে সর্বোত্তম সহযোগিতা ও উৎসাহ যোগাবেন। পাশাপাশি শিশুখাদ্য কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে কোনো অবস্থাতেই গুড়োদুধের পক্ষে মতামত দেবেন না।

chardike-ad

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের দেশের মায়েরা নবজাতক শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ প্রবণতায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে আশার কথা, কয়েক বছর ধরে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ জোরেসোরে পালিত হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে।

গত মেয়াদে তিনিই প্রথমবারের মতো দেশে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১০ সাল থেকে দিবসটি নিয়মিতভাবে পালিত হয়ে আসছে। ৫ বছরে ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রচারণা ও সচেতনতার কারণেই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জন্ম থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত পৃথিবীর সকল শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে বছরে ১৫ লাখেরও বেশি শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। এ জন্য দেশের সকল শিশুকে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে। ৬ মাস পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি পরিপূরক খাবার দিতে হয়। এ খাবার যাতে যথাযথ পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এজন্য এ কার্যক্রমকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পুষ্টি সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের সুস্বাস্থ্য এবং যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করা উন্নত জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত। এজন্য সরকার স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। আমরা ৫ বছর মেয়াদী জাতীয় পুষ্টি সেবাসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই নবজাতকের স্বাস্থ্য কৌশলপত্র অনুমোদন দিয়েছি। জাতীয় পুষ্টিনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে ৬ মাসে উন্নীত করেছি।

পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা বাকারা’র উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোরআনে শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। মায়ের দুধ
খাওয়ালে শিশু মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে উঠে। তিনি বলেন, অনেকে গুড়ো দুধকে বিকল্প দুধ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু মায়ের দুধের বিকল্প বলে কিছু নেই। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে শুধু শিশুর জীবন রক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় তাই নয়, বরঞ্চ কৌটার দুধ আমদানি করতে যে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়, তারও সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার গুড়ো দুধ আমদানি করতে হয়। এর বেশিরভাগই শিশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমরা যদি শতভাগ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে পারি, এ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি অফিসে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল থেকে কর্মজীবী মায়েদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে একজন করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে জাতীয় পুষ্টি সেবার মাধ্যমে শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসাবে পুনঃশক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২০৭টি হাসপাতালে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এইচপিএনএসডিপি কর্মসূচি ২০১৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে জরুরি প্রসূতি সেবা, প্রশিক্ষণ, ইপিআইসহ আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শিশুস্বাস্থ্য সহ দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুধু শহর নয়, গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ যাতে সহজে চিকিৎসা সুবিধা পান, আমরা সে ব্যবস্থা করেছি। সারাদেশে প্রায় ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ হাজার ২২১ জন সহকারী সার্জন বৃহস্পতিবার যোগদান করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। । এ সময় তিনি বর্তমান ৫ হাজার নার্সের সাথে নতুন করে আরও আরও ১০ হাজার নার্সের পদ সৃষ্টি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

তিনি জানান, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য কমপক্ষে একজন করে মোট ১৩ হাজার ২৫০ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ২৯ ধরনের ওষুধ নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে।

গত ৫ বছরে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার ৪৪০ জন সহকারী সার্জন এবং ১৯৬ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এডহক ভিত্তিতে ৪ হাজার ১৩৩ জন সহকারী সার্জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ৬ হাজার ২২১ জন সহকারী সার্জন বৃহস্পতিবার যোগদান করবেন।

৬৪টি জেলায় ৬ হাজার ৩৯১ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ করা হয়েছে। ৪র্থ শ্রেণীর বিভিন্ন পদে ২ হাজার ৯৮৯ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ১ হাজার ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ১টি করে শিশু হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে একটি করে শিশু হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া ১ হাজার ২০ জন সাব অ্যাসিট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।