সোমবার । জুন ১৬, ২০২৫ । ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২ জুন ২০২৫, ৩:৩৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

রাশিয়ার বিমানঘাঁটিগুলোতে ব্যাপক ‘ড্রোন’ হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন


রাশিয়ার বিমানঘাঁটিগুলোতে ব্যাপক 'ড্রোন’ হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন

রাশিয়ার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিমানঘাঁটিতে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এটি ছিল ফ্রন্টলাইন থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের সবচেয়ে দীর্ঘপথ পেরিয়ে চালানো অভিযান। ‘স্পাইডার’স ওয়েব’ নামে একটি গোপন অপারেশনের অধীনে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) অন্তত ৪১টি রাশিয়ান সামরিক বিমানে আঘাত হানে। এই বিমানগুলো ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে বোমাবর্ষণের কাজে ব্যবহৃত হতো।

মস্কো নিশ্চিত করেছে যে, মুরমানস্ক, ইরকুটস্ক, ইভানোভো, রিয়াজান এবং আমুর অঞ্চলের পাঁচটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ইউক্রেন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এমন এফপিভি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ‘কিয়েভ শাসনব্যবস্থা এফপিভি ড্রোন ব্যবহার করে মুরমানস্ক, ইরকুটস্ক, ইভানোভো, রিয়াজান এবং আমুর অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। ইভানোভো, রিয়াজান ও আমুর অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। সামরিক বা বেসামরিক কারও মৃত্যু হয়নি। হামলায় জড়িত কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।’

মস্কো আরও স্বীকার করেছে যে কিছু বিমান আগুনে পুড়ে গেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘মুরমানস্ক ও ইরকুটস্ক অঞ্চলের সামরিক বিমানঘাঁটির কাছাকাছি থেকে এফপিভি ড্রোন ছোড়া হয়েছে, যার ফলে কয়েকটি বিমান দগ্ধ হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

স্পাইডার’স ওয়েব অপারেশনের কৌশল

রাশিয়ার ২০২২ সালের আগ্রাসনের জবাবে ইউক্রেন প্রায়ই ড্রোন হামলা চালিয়ে থাকে, তবে এইবার ব্যবহৃত কৌশল ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পরিকল্পনার পর ‘স্পাইডার’স ওয়েব’ অপারেশনটি বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি এটিকে ‘আমাদের দীর্ঘতম পাল্লার অভিযান’ বলে অভিহিত করেছেন।

জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেন এই হামলায় মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করে এবং টার্গেট করা বিমানঘাঁটিগুলোর ৩৪ শতাংশ কৌশলগত ক্রুজ মিসাইল ক্যারিয়ার নষ্ট করে।

ইউক্রেনের এসবিইউ সূত্র জানিয়েছে, এই অভিযানের পরিকল্পনায় অত্যন্ত জটিল সরবরাহ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়েছিল। ড্রোনগুলো আগেভাগেই রাশিয়ার ভেতরে পাচার করা হয়েছিল। কাঠের তৈরি কেবিনের ছাদে লুকিয়ে এগুলো ট্রাকে বসানো ছিল। হামলার সময় সেই কাঠের ছাদ রিমোট কন্ট্রোলে খুলে দেওয়া হয় এবং ড্রোনগুলো স্বল্প দূরত্বে উড়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

এসবিইউ যে ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় কালো রঙের ছোট ড্রোনগুলো কন্টেইনার সদৃশ কাঠামোর ভিতরে লুকানো ছিল।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, এই ড্রোনগুলো ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে নয় বরং রাশিয়ার বিমানঘাঁটির ‘তাৎক্ষণিক নিকটবর্তী’ অঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে।

ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৪,৩০০ কিলোমিটার দূরে ইরকুটস্ক অঞ্চলের বেলায়া বিমানঘাঁটি এবং ফ্রন্টলাইন থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মুরমানস্ক অঞ্চলের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটি, লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এই দুই ঘাঁটিতে রুশ বিমানে আগুন জ্বলতে দেখা যায় এবং রাস্তায় কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।

রাশিয়ার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইভানোভো, রিয়াজান ও আমুর (চীনের সীমান্তঘেঁষা রাশিয়ার ফার ইস্ট অঞ্চল) এলাকায় চালানো অন্যান্য হামলাও প্রতিহত করা হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি

ইউক্রেনের এসবিইউ দাবি করেছে, এই ড্রোন হামলায় প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রুশ কৌশলগত সামরিক বিমান ধ্বংস হয়েছে। তবে রাশিয়া এখনও এই দাবি স্বীকার করেনি।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুরমানস্ক ও ইরকুটস্ক অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে কয়েকটি বিমান আগুনে পুড়ে গেছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

রাশিয়া জানিয়েছে, ট্রাক চালকসহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের একজনের ট্রাক থেকেই ড্রোন উড়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, যেসব ব্যক্তি হামলা প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের সময় মতো রাশিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সময় নির্বাচন

তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের এক সংবেদনশীল মুহূর্তে অপারেশনটি চালানো হয়েছে। এমন এক সময়ে হামলাটি চালানো হয়েছে যখন যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ছে।

জেলেনস্কি জানান, তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলকে সোমবার ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠাচ্ছেন।

এই বৈঠকের আয়োজক হচ্ছে তুরস্ক, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিচুক্তির চাপের কারণে সম্ভব হয়েছে।

কারণ রাশিয়া এর আগেও যুদ্ধবিরতির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে, তারা নিজেদের শান্তি প্রস্তাব তৈরি করেছে তবে আগাম তা প্রকাশ করবে না।