Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শুরু হচ্ছে ইংলিশ ফুটবলের জমজমাট লড়াই

ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে মাসখানেক হল। ছুটি কাটিয়ে খেলোয়াড়েরা ক্লাবের অনুশীলনে যোগ দিতে আরম্ভ করেছেন চলতি মাসের শুরুর দিক থেকে।কিছু গা গরমের প্রীতি ম্যাচ আর দুয়েকটা ক্লাব টুর্নামেন্টের পর চলতি সপ্তাহ থেকেই মাঠে গড়াচ্ছে প্রধান প্রধান ঘরোয়া লীগগুলো। শনিবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম সোয়ানসি সিটির ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল। বার্কলেস প্রিমিয়ার লীগ নামেও পরিচিত টুর্নামেন্টটির ২৩তম আসরকে সামনে রেখে লিখেছেন তালহা ইসলাম সজীব

Free-Barclays-Premier-League-Live-TV

chardike-ad

শুধু নিজ দেশেই নয়, সমগ্র দুনিয়াতে ইংলিশ লীগ সমানভাবে সমাদৃত। অনেক রথী-মহারথী ফুটবলারকে তারকা বানিয়েছে এই প্রিমিয়ার লীগ। হালের ক্রেজ পর্তুগীজ উইঙ্গার ও বর্তমান রিয়েল মাদ্রিদ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, রবিন ভ্যান পার্সি, স্টেফেন জেরার্ড, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, সেস ফাব্রিকাস, স্ট্রাইকার ওয়েন রুনি, সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার ও এক সময়কার সেনসেশন ডেভিড বেকহাম, সাবেক ফরাসী ফুটবলার থিয়েরো অরির মত নামকরা সব খেলোয়াড়ের জন্ম এই ইপিএল থেকে। এত গেল প্লেয়ারদের কথা। বহু মাস্টারমাইন্ড কোচেরও সৃষ্টি হয়েছে এখান থেকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় পূর্ববর্তী ইউনাইটেড কোচ স্যার আলেক্স ফারগুসোন, আর্সেনাল বস আর্সেন অয়েঙ্গার, সাবেক চেলসি ম্যানেজার আন্দ্রে ভিলাস বোয়াস, বর্তমান লিভারপুলের কোচ ব্রেন্ডন রজার্সের কথা। তাঁরা নিজেদের মেধা, মনন, বুদ্ধি, কৌশলের মাধ্যমে শুধু লীগটিই নয়, উপকৃত করেছেন গোটা বিশ্ব ফুটবলকেই। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ইপিএলের কাছে অনেকাংশেই ঋণী থাকবে ফুটবল পরিমণ্ডল।

গত মৌসুমে এক ঝলক…

অনেক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে গত সিজনটি। জায়ান্ট ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পতন, দ্বিতীয় বারের মত মরিনহোর নেতৃত্বে চেলসির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যুদ্ধ, দীর্ঘদিন পর লিভারপুলের সেরা চারে ফিরে আসা এবং ম্যানচেস্টার সিটির কোচ নিসেবে অভিষেক সিজনেই ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনির শিরোপা জয়। সব মিলিয়ে এক আলোচিত মৌসুম পার করেছিল প্রিমিয়ার লীগ।

অপেক্ষা আরও একটি জমজমাট আসরের…

কেমন হতে পারে ১৪-১৫ সিজনের প্রিমিয়ার লীগ? কি করতে পারে বড় দলগুলো? মধ্যম সারির দলগুলোর অবস্থা এবং শেষের দলগুলোর চাহিদাই বা কি? চলুন বোদ্ধাদের বিশ্লেষণগুলো একটু সারসংক্ষেপ করা যাক!

ম্যানচেস্টার সিটি

manchester-city-vincent-kompany-epl-title
চুয়াল্লিশ বছর পর লীগজয়ের আনন্দটা একটু বাঁধভাঙ্গাই ছিল সিটিজেনদের

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি এবারও শিরোপার অন্যতম দাবীদার। সাবেক কোচ রোবার্তো মানচিনির অধীনে ১১-১২ মৌসুমে ৪৪ বছর পর ইংল্যান্ডে সেরা হওয়ার গৌরব পুনরুদ্ধার করেছিল। তবে পরের সিজনেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে শিরোপা হারানো এবং ঐ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ে সিটিজেনরা। এর ফলে মানচিনিকে বরখাস্ত করে নিয়োগ দেওয়া হয় পেল্লেগ্রিনিকে। দলের দায়িত্ব নিয়েই আমূল পরিবর্তন আনেন এই কলোম্বিয়ান। তেভেজ ও বালাতোল্লিকে বেচে দেন। কিনে নেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার নেগ্রেডো ও মিডফিল্ডার জেসাস নাভাসকে। সবচেয়ে বড় কথা পেল্লেগ্রিনির কোচিং দর্শনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছিল ম্যানসিটি। সফলও হয়েছে। এক সিজন পরই টাইটেল পুনরুদ্ধার করে তারা। এই মৌসুমেও এগিয়ে আছে স্বনামধন্য ক্লাবটি। সম্প্রতি স্ট্রাইকার আগুয়েরো ও মিডফিল্ডার সিলভা দলের সাথে নতুন চুক্তি করেছেন। ফলে নিজেদের কাছে শিরোপা রেখে দেওয়ার জন্য  আপ্রান চেষ্টা করবে ম্যানচেস্টার শহরের ক্লাবটি।

লিভারপুল

দীর্ঘদিন পর টাইটেলের খুব কাছাকাছি যেয়েও শেষ মুহূর্তে ক্রিস্টাল প্যালেসের সাথে নাটকীয়ভাবে ড্র করায় গত সিজনে ইংল্যান্ড জয় করতে পারেনি লিভারপুল। তবে মৌসুমে একটাই পাওয়া, সেটা হল এনফিল্ডে চ্যাম্পিয়নস লীগে ফিরে আসা। সুয়ারেজ, স্টারিজ, স্টারলিং ত্রয়ীর সামনে অনেকটাই অসহায় ছিল ডিফেন্ডাররা। তবে ১৪-১৫ তে আগের সেই টিমটিকে পাচ্ছেন না ব্রেন্ডন রজার্স। কারন দলের আসল কাণ্ডারি উরগুয়েন স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজের বার্সেলোনাতে চলে যাওয়া। সাউদাম্পটন থেকে অ্যাডাম লালানাকে নিয়ে আসা হলেও তিনি কতটুকু সুয়ারেজের অভাব করতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। ফুটবল বোদ্ধাদের মতে অল রেডরা হয়তো এবার তাদের পূর্বের স্থান অর্থাৎ শেষ চারের বাইরে অবস্থান করবে।

চেলসি

এবারের লীগে ফেভারিট ধরা হচ্ছে চেলসিকে। হোসে মরিনহোর নেতৃত্বে যথেষ্ট সুগঠিত নীল শিবির। করিয়েছেন চমৎকার কিছু সাইন আপ। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ থেকে স্ট্রাইকার ডিয়েগো কস্তা ও রক্ষণ সেনা ফিলিপে লুইস, সাবেক খেলোয়াড় দিদিয়ের দ্রগবার পুনরায় অন্তর্ভুক্তি এবং বার্সেলোনা থেকে মিডফিল্ডার সেস ফাব্রিগাসকে উড়িয়ে আনা হয়েছে। পক্ষান্তরে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের সাথে চুক্তি নবায়ন করেননি চেলসি কর্তৃপক্ষ। তো যাই হোক শেষ পর্যন্ত ‘স্পেশাল ওয়ান’ মরিনহো কি পারবে চেলসিকে তার নেতৃতে দ্বিতীয়বারের মত লীগ জেতাতে? উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই!

আর্সেনাল

community shield winner
গেলো সপ্তাহে কমিউনিটি শিল্ডজয়ী আর্সেনাল দল

যে কোনো ধরনের কাপ জয়ের জন্য আর্সেনালের মত একটি দলের ৮ বছরের অপেক্ষাটা একটু বেশীই। কেনই বা হবেনা। বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ ওয়েঙ্গারের ছায়ায় যে দলের বেড়ে ওঠা তাদের জন্যে  ৮ বছর তো অনন্তকালেরই নামান্তর। সেই শিরোপা খরা কাটিয়েছে গানাররা গত সিজনে। তবে ইপিএল নয়, এফএ কাপ জয় করে সমর্থকদের কাছে খানিকটা হালকা হয়েছে তারা। গত মৌসুমের ট্র্যান্সফার মার্কেটে রিয়েল মাদ্রিদ থেকে মেসুত ওজিলকে নিয়ে এসে অনেকটাই চমকে দিয়েছিলেন আর্সেনাল বস। শুরুটা ছিল দারুণ। প্রায় ১২০ দিন ছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। তারপরেই অধঃপতনের শুরু। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে চ্যাম্পিয়নস লীগে কোয়ালিফাই করাটাই হুমকির মুখে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে রকম কিছু না হলেও শেষ চারে টিকে থাকতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে তাদের। এজন্য অবশ্য ইনজুরিকে দায়ী করতেই পারেন সমর্থকরা। ওজিল, ওয়ালকোটরা লম্বা সময় সাইড বেঞ্চে কাটিয়েছেন। ১৪-১৫ সিজনে ইতোমধ্যেই একটি শিরোপা নিশ্চিত করেছে গানাররা। ম্যান সিটিকে হারিয়ে নিশ্চিত করেছে কমিউনিটি শিল্ড। বার্সেলোনা থেকে চিলিয়ান ফরোয়ার্ড সানচেজকে দলে ভেড়ানো হয়েছে। অগ্রভাগে থাকবেন ফরাসী স্ট্রাইকার জিরু। ওজিল, ক্যাজোরোলা, আর্টেটা দিয়ে গঠিত মধ্যমাঠ। গোলবারের দায়িত্বে আছে বিশ্বস্ত সেজনি। ক্যাপ্টেন ও ডিফেন্ডার থমাস ভারমালিনকে যদিও বার্সেলোনার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, তারপরেও কোসিচিলিনি ও পার মার্টাসাকারের উপর আস্থা আছে কোচের। সব মিলিয়ে আর্সেনালকে মৌসুমের অন্যতম সেরা দল বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

গত মৌসুমের সবেচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত, প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসের সব থেকে সফল দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২৭ বছর ধরে ইউনাইটেডকে পরিচালনাকারী স্যার অ্যালেক্স ফারগুসনের হাত থেকে দায়িত্ব নেন তারই স্বদেশী স্কটিশ কোচ ডেভিড ময়েস। নতুন ম্যানেজারের অধীনে কেমন যেন খাপ ছাড়া হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী দলটি। একের পর এক পরাজয়…যেসব টিমের কাছে কখনোই ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রার্ফোডে হারতে হয় নি তাদের কাছেও হেরে যায় রেড ডেভিলরা।  সাম্প্রতিকালের সব চেয়ে বাজে খেলা খেলে ম্যানচেস্টার শহরের ক্লাবটি। ছিটকে পড়ে যায় সামনের সিজনের চ্যাম্পিয়নস লীগ থেকে। দলের এই বাজে ফর্মের জন্য মৌসুমের মাঝেই ময়েসকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় খেলোয়াড় রায়ান গিগসকে। শেষ পর্যন্ত রেড ডেভিলসরা সপ্তম স্থানে থেকে ১৩-১৪মৌসুম শেষ করে। ১৪-১৫ সিজনে ইউনাইটেডের দেখভালের জন্য সদ্য সাবেক হওয়া নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ লুইস ভ্যান গালকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই দলকে জিতিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপ। দেখা যাক আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ইপিএলের নতুন মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পায় কিনা?

rooney_manchester_united
ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপ জয়ের পর আসছে মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতটা এভাবেই দিলেন ম্যানচেস্টার ফরোয়ার্ড ওয়েন রুনি।

এছাড়া এভারটন, টটেনহাম, নিউক্যাসেল ইউনাইটেড, সোয়ানসি সিটি, স্টোক সিটির মত মধ্য সারির দলগুলো ইউরোপা লীগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লড়াই করে যাবে। অপরদিকে নতুন তিনটি দল বারনলে, লেচেস্টার সিটি ও কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের চেষ্টা থাকবে রেলিগেশন এড়িয়ে সামনের আসরেও টিকে থাকার।