আগামী এক বছরে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ হাজার কর্মী নেবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘জাপানে নতুন শ্রমবাজার : কর্মী প্রেরণের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই সেমিনারের আয়োজন করেছিল।
সেমিনারে আসিফ নজরুল বলেন, বিদেশে কর্মী পাঠানোর সরকারি প্রক্রিয়াগুলো অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিল ও দীর্ঘ। এসব প্রক্রিয়া দুর্নীতি ও অপচয়ের পথ তৈরি করে। তাঁর মতে, প্রক্রিয়াগুলো সহজ করলে দুর্নীতির সুযোগও কমে যাবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন শিক্ষক ছিলাম, কিন্তু ২০ জন দিয়েও কাজ চালানো সম্ভব ছিল। অনেককে শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে।’
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগের সরকার চুক্তি করেছে—তারা (মালয়েশিয়া) রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দেবে, আমরা সেখান থেকে নির্ধারণ করব। এটা দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি, যেটাকে আমরা সিন্ডিকেট বলি। এখন আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সবাই বলছে সিন্ডিকেট করা যাবে না। কিন্তু সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হলে চুক্তি পরিবর্তন করতে হবে, আর সেটা তো মালয়েশিয়া সরকারকে জোর করে করা যাবে না—তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “চুক্তি যদি পরিবর্তন না করে, তাহলে আমার সামনে দুইটা পথ খোলা আছে। এক—তাদের দেওয়া ২৫, ৫০ বা ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠানো। দুই—তাদের বলা যে আমরা লোকই পাঠাব না। আমি যদি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোক পাঠাই, সবাই বলবে আমি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। আবার যদি না পাঠাই, তাহলে ৪০ হাজার কর্মী যেতে পারবে না। মালয়েশিয়া এটা মনে রাখবে। এর ফলে ভবিষ্যতে এক-দুই লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
জাপানের শ্রমবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জাপানে কর্মীর চাহিদা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই চাহিদা পূরণের সক্ষমতা আমাদের আছে কি? আমাদের অদক্ষ শ্রমিক আছে। ভাষা শিখছে, কিন্তু দক্ষ হতে পারছে না। তাই সমাধান একটাই—জাপানের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ‘জাপান সেল’ করেছি। সেখানে একটি ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট তৈরি হবে। পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের চিন্তা করছি। জাপানি উদ্যোক্তাদের বলেছি—আপনারা টিটিসি (টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার) পরিচালনার দায়িত্ব নিন। আপনারা জাপান থেকে প্রশিক্ষক এনে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দিন। পুরো টিটিসি আপনাদের দিয়ে দেব। ইতোমধ্যে মনোহরদী টিটিসি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, আপনারা আপনাদের মতো করে গড়ে তুলুন।”