বুধবার । ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
জাহাঙ্গীর অরুণ ফিচার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২:৩২ অপরাহ্ন
শেয়ার

যে ঘড়ি পৃথিবীর সবচেয়ে বিক্রিত, বিকৃত, আলোচিত ও সমালোচিত


Casio cover

ছবি: সংগৃহীত

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এমনকি ওসামা বিন লাদেনের মত মানুষ যে ঘড়িটা পরতেন সেটি আদতে আহামরি দামি কোন ঘড়ি না। তবে নিশ্চিতভাবে ঘড়িটি আপনি চেনেন। হয়তো আপনিও পরেন কিংবা কখনো পরেছেন।

Casio Inner

বারাক ওমাবা ও বিন লাদেন

এই ঘড়ি সম্পর্কে কিছু বিষয় জানালেই আপনি এর নাম জেনে যাবেন।

ঘড়িটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ঘড়ি।
দাম? খুবই কম! মেইড ইন জাপান ঘড়ি, তাও মাত্র ১৫ থেকে ৩০ ডলারের মধ্যে পাওয়া যায়, যা এক প্রকার অবিশ্বাস্য। আর এই ঘড়ির চায়নিজ কপি বাংলাদেশের ফুটপাথে ৫০ টাকাও পাওয়া যায়! ঘড়িটি এক ব্যাটারিতে চলে ৭ বছর! এলার্ম আর লাইট কম ইউজ করলে এক ব্যাটারিতে ১৫ বছর পর্যন্তও চালানো সম্ভব!

Casio Inner 2
চরম গরম ও চরম ঠান্ডায় এই ঘড়ি সময় প্রায় ঠিকঠাক দেয়। ওজন মাত্র ২১ গ্রাম। পানির নীচে ৩০ মিটার পর্যন্ত নিলেও এর ভিতরে পানি ঢুকে না।

Module 593 নামের একটি কোয়ার্টজ মুভমেন্ট দিয়ে এই ঘড়ির সেকেন্ডের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়, যা মাসে সাধারনত ৩০ সেকেন্ডে কম বা বেশি হয় (পরিবেশের তাপ, চাপ ও ব্যাটারি চার্জের ওপর ভিত্তি করে)। মজার বিষয় হইলো কোটি কোটি টাকা দামের ঘড়িতেও সেকেন্ডের হেরফের এরেচেয়ে বেশি হয়! ঘড়ির এক সেকেন্ড কতটা সময় নিয়ে হবে, এইটা মাপা অত সহজ না। কোন কোয়ার্টজ দিয়ে তা কতটা নির্ভুলভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং পরিবেশের তাপ, চাপ ও আরো অনেক কিছুর উপর তা নির্ভর করে।

Casio Inner 3

ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৯ সালে এই ঘড়িটি বাজারে আসে। এখনো এই ঘড়ি প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ কপি বিক্রি হয়! (বিক্রির এই সংখ্যা অরিজিনাল জাপানের ঘড়ির। নকলগুলোর সংখ্যা যে কত তার কোন হিসাব নেই!)। সে হিসেবে আজ পর্যন্ত ঘড়িটির প্রায় ৮ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে।

এত এত গুণ যে ঘড়ির মধ্যে আছে সেই ঘড়ির কপালেও আছে বাজে কালিমা। গুয়ান্তানামো বে কারাগারে একটা সময় দেখা গেলো বন্দিদের প্রায় সবাই এই ঘড়ি পরে! বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরে! লাদেনওতো একই ঘড়ি পরে। পরে ঘটনা যা জানা যায়, তা ভয়াবহ। টাইম বোমা বানাতে এই ঘড়ির সার্কিট সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করে। ঘড়িটা যেকোনো পরিবেশে এতটাই নির্ভরযোগ্য যে নানান ঘাত-প্রতিঘাত সয়েও এই ঘড়ি নির্ভুল কাজ করে, তাই এর উপর সন্ত্রাসীদের এত আস্থা!

Casio Inner 4

ছবি: সংগৃহীত

ঘড়িটা যেহেতু সর্বাধিক জনপ্রিয় ঘড়ি, তাই এর নকলেরও ছড়াছড়ি। দুটো পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা যায়, ঘড়িটা আসল নাকি নকল। আসল ঘড়িটার ডান পাশের বাটন ৩ সেকেন্ড চাপ দিয়ে ধরে রাখলে, CAS 1o লেখা ওঠে।
তিনটি বাটন এক সাথে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে, ডিসপ্লের প্রতিটা সম্ভাব্য ডিজিটের সবকটি জ্বলে উঠে। এরপর যে কোন একটা বাটন চাপ দিলেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।

F-84W নামের ক্যাসিওর প্রায় হুবহু একইরকম আরেকটি মডেল ১৯৮৬ সালে মার্কেটে এসেছিলো, শুধুমাত্র কালো রঙের। এই মডেলটা ক্যাসিও কোম্পানি সাধারনত জাপানের বাইরে বিক্রি করে না। এজন্য এই মডেলের ঘড়িটাকে Japanese Domestic Model (JDM) বলা হয়। CASIO F-91W মডেলের ঘড়িটি সারাবিশ্বে পাওয়া যায়, পাওয়া যায় নানান রঙে।

ঘড়ির ক্যালেন্ডারটি লিপইয়ার ক্যালকুলেট করে না। ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ২৮ দিনে সেট করা। যদি কখনো লিপইয়ার হয়, তো একদিন অপেক্ষা করে, পরের দিন ম্যানুয়ালি ডেট আবার মার্চের ১ তারিখ করে দিতে হয়।