ঈদের দিন কেমন কাটল? ‘আর ঈদ।’ এভাবেই হাতাশার সুরে উত্তর দিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। ঈদ আসে, ঈদ যায় কিন্তু ওই বৃদ্ধার মতো হাজারো বৃদ্ধাশ্রমবাসীর দিনটি কাটে হতাশায়, কষ্টে আর স্মৃতিচারণ করে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ার প্রবীণ নিবাসে সোমবার দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কথা হয়। ছেলে-মেয়ে কোথায়? এ কথাটি জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিলেন, ‘জাহান্নামে।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় গড়ে উঠা প্রবীণ নিবাসটির ১১ তলা ভবনটির একটি সিটে থাকেন তিনি। চার মাস আগে তার ছোট মেয়ে তাকে এখানে রেখে যায়। সেই থেকে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তার আর কখনো দেখা বা কথা হয়নি।
ঈদের দিনের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে যশোরের ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘সকালে লতার মা (তাকে দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিত মাজেদা নামের এক নারী) একটু সেমাই দিয়েছিল। দু’চামচ খেয়েছি। মাংস এখনও খাইনি। পরে হয়তো পাব।’
প্রবীণ নিবাসটিতে বসবাসকারী বৃদ্ধার সংখ্যা মাত্র তিনজন। যার মধ্যে একজন চট্টগ্রামে তার বাড়িতে গেছেন। অপরজন এসেছেন রাজধানীর তেজগাঁও থেকে। অসংলগ্ন কথায় দ্য রিপোর্টকে তিনি জানান, ঈদের দিনে ডিম খেয়েছেন।
‘ঈদ মানে তো সকলকে নিয়ে আনন্দ করা। কিন্তু সেই আপনজনদের পাব কোথায়? আমাদের জীবনে আর কখনোই সেইভাবে ঈদ আসবে না।’ দ্য রিপোর্টকে এভাবেই বললেন রাজধানীর আগারগাঁও-এর প্রবীণ হিতৈষী সংঘে বসবাসকারী কয়েকজন বৃদ্ধ।
পরিকল্পনা বিভাগের এককালের এক চাকুরে জানান, ঢাকা শহরে বাড়ি আছে তার। ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। একাকিত্বের যন্ত্রণা সইতে না পেরে বড়ি ভাড়া দিয়ে এখানে এসে উঠেছেন। সকালে পাশের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে আর বাইরে যাননি।
তিনি বলেন, ‘ঈদ আসে, ঈদ আসবে, কিন্তু সেই আনন্দ কি আর আসবে কোনো দিন?’ দ্য রিপোর্ট।