Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সিঙ্গাপুরে বিদেশিদের কাজের সুযোগ বন্ধ!

Singapore

ফেনী জেলার আবুল হাসেম (৪৪) দীর্ঘ আট বছর সিঙ্গাপুরে একটি মেরিন ওয়ার্কশপে চাকরি করে আসছেন। কর্মস্থলে বিদেশিদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে নামটা কবে যেন ‘হাসেম’ থেকে শুধু ‘স্যাম’ হয়ে গেছে । তিনিও এখন এতে অভ্যস্ত ।

chardike-ad

দীর্ঘ দিনের সঞ্চয় দিয়ে গ্রামে একতলা বাড়ি করেছেন। ছাদটা এখনও সেই টিনেরই আছে। জমানো টাকা যা ছিল সব এতেই শেষ। এখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল – আরও কয়েক বছর সিঙ্গাপুরে চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়ে দেশে ফিরে যাবেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর বাকি জীবনটা স্বামী-স্ত্রী একসাথে কাটাবেন ।

কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাঁর ভাগ্যে হয়তো ভিন্ন কিছু রেখেছিলেন ।

কয়েকদিন আগে নিয়োগদাতা কোম্পানি সিঙ্গাপুরের কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে (এম.ও.এম) হাসেমের ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্য আবেদন করে। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যেই চিঠি দিয়ে কোম্পানিকে জানিয়ে দেয়া হল – এই পারমিট আর নবায়ন করা হবে না। এমনকি চিঠিতে এর কোন কারণও উল্লেখ করা হয়নি ।

অপ্রত্যাশিত এই খবরে আবুল হাসেমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কারণ, এই বয়সে দেশে ফিরে নতুন করে চাকরি খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। আবার হাতেও এমন টাকা-পয়সা নেই, যে দেশে গিয়ে কোন ব্যবসায় হাত দেবেন। নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অস্থির হয়ে পড়লেন তিনি ।

এত পুরনো আর দক্ষ একজন কর্মচারীকে ছাড়তে তাঁর কোম্পানিও চাইছিল না। কিন্তু, সরকার অনুমোদন না দিলে একজন বিদেশিকে চাকরিতে রাখার ক্ষমতা কারো নেই । তাই বাধ্য হয়ে হাসেমকে জানিয়ে দেয়া হল – সিঙ্গাপুরে থাকার দিন শেষ। এবার দেশে ফিরে যাও ।

আবুল হাসেমের মত একই পরিস্থিতির স্বীকার সিঙ্গাপুরে কর্মরত শতাধিক বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক হাজার নাগরিক। পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সরকার আর নবায়ন করে দিচ্ছে না। যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সিঙ্গাপুর সরকারের ‘বিদেশি হঠাও’ নীতির কারণে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন নিজের দেশে ।

সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশই বিদেশিকর্মী। তাদের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ আর শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিকরা যেমন আছেন, তেমনি মালয়েশিয়া, চীন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরির জন্য আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এই বিশাল জনশক্তির কারণে সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা নিজ দেশে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন যাবত অভিযোগ করে আসছিল। কিছুদিন আগে তারা এ নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটি র‍্যালি বের করেছিল, যার স্লোগান ছিল – ‘আমাদের সিঙ্গাপুর আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও’ ।

আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে সিঙ্গাপুরের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের এই দাবিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে অধিকাংশ খাতে বিদেশিদের বাদ দিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের নিয়োগে প্রাধান্য দিয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তারা।

এই নিয়মে একজন বিদেশি নাগরিককে চাকরিতে নিয়োগ দিতে হলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রথমে প্রমাণ করতে হবে – এই ধরনের যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও বিদেশি কর্মীদের নিয়োগের বিপরীতে প্রতি মাসে সরকারকে বিশাল অংকের ফি (লেভি) দিতে হয় । তাই এত চড়াই উতরাই পার করে বিদেশিদেরকে চাকরি দেয়ার চিন্তা এখন অনেক কোম্পানিই আর করছে না ।

পাশাপাশি যেসব বিদেশি কর্মীদের কাজের অনুমতিপত্রের (ওয়ার্ক পারমিট) মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের অনেককেই আর নবায়ন করছে না সরকার। ফলে তাদেরকে ফিরে যেতে হচ্ছে নিজ দেশে ।

শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের (এম.ও.এম ) ওয়েব সাইটে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্মাণ খাতে ও শিপ ইয়ার্ডে কাজের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিকদের নিয়োগ দেয়া যাবে। কারণ, কায়িক পরিশ্রমের ও কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা এই ধরনের চাকরিতে জড়ায় না ।

এছাড়াও, ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ সিঙ্গাপুরে বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা বর্তমানের অর্ধেকেরও কম হয়ে যাবে বলে আশাবাদী সিঙ্গাপুর সরকার।

সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪