Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু বিশ্ব ইজতেমা

IJTEMAআম বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও ব্যাপক প্রস্তুতিতে শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই ময়দানে ঈমান, আমল ও আখলাকসহ তাবলীগের ছয় উসুল সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাজধানীর ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে তিন দিনব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী ১১ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব ১৬ই জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হবে এবং ১৮ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে  বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।

chardike-ad

দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মুসল্লী যোগ দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ এ ধর্মীয় সমাবেশে। ইজতেমাকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক নজরদারি ও প্রশাসনের তরফে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি।

টঙ্গীর তুরাগ তীরে ফজরের নামাজের পর তবলীগ জামাতের অন্যতম জ্যেষ্ঠ মুরব্বি পাকিস্তানের মাওলানা ইসমাইল হোসেনের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সমাবেশ। দেশী-বিদেশী মুসল্লীদের পদচারণায় ইসলামী মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। দেশের ৩২টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লী জেলাভিত্তিক ৪০টি আলাদা খিত্তায় বিভক্ত হয়ে অবস্থান করছেন শামিয়ানা খুঁটির অস্থায়ী নিবাসে। বিশ্বের অর্ধশত দেশ থেকে কয়েক হাজার মেহমান ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের মধ্যে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ট্রেন, বাস, ট্রাক ও ছোট ছোট যানবাহনে করে দীর্ঘ পথ হেঁটে, বাস, ট্রাক, রেলসহ বিভিন্নভাবে ইজতেমা ময়দানে আসেন। তাবলীগ জামায়াতের লাখ লাখ সদস্যের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীর। শীতের ভোগান্তি সত্ত্বেও কেবল দীনের শিক্ষাগ্রহণের জন্যই ইজতেমার কষ্টকে আমলে নিচ্ছেন না মুসল্লীরা। শামিয়ানার নীচে মুসল্লীরা মুরব্বিদের বয়ান শুনছেন।

ইতিমধ্যেই লাখো মুসল্লি সেখানে সমবেত হয়েছেন। বিভিন্ন জেলার কিশোর, যুবক, বয়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণির মানুষ ইজতেমায় এসেছেন। অনেকে দীর্ঘ চল্লিশ বা ১২০ দিন ইসলামের দাওয়াত শেষ করে ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইজতেমা শেষে দেশ-বিদেশ ঘুরে ইসলামের দাওয়াত দিতে ৪০ বা ১২০ দিনের জন্য বেরিয়ে পড়বেন। ধনী, দরিদ্র সবাই এখানে এক শামিয়ানার নিচে একসঙ্গে অবস্থান করছেন। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যবহার্য দ্রব্যাদি কাঁধে বহন করে মাঠে আসছেন।

আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, এবার প্রথম দফায় দেশের ৩২টি জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ও সর্বস্তরের মুসলমান প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশের মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ইজতেমার মাঠকে মোট ৪০টি খিত্তায় ভাগ করে জেলা অনুযায়ী স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লিদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ময়দানের পশ্চিম দিকে বিদেশি মেহমান খিত্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে নামাজের স্থান। আর তুরাগ তীরের পশ্চিম দিকে মাঠের মাঝামাঝি রয়েছে বয়ানের মঞ্চ। মাঠের প্রতিটি কোণে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য মাইক লাগানো হয়েছে। ইজতেমা চলার সময় থাকবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ।

গিয়াস উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের বাইরে থেকে মুসল্লিদের সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১৭ হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। এবার ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সেনা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর উপর এবার সাতটি ভাসমান সেতু স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে স্থাপিত ১১টি নলকূপের মাধ্যমে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পানি পান, ওজু-গোসল, পয়নিষ্কাশন ইত্যাদির জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে চারটি জেনারেটরও।

এদিকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। ইজতেমায় পুলিশের পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমা স্থলে মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশন (বিআরটিসি) গতকাল বুধবার ৭ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও টার্মিনাল থেকে বিশেষ যাত্রীসেবা দেবে।

বিআরটিসি বাস আব্দুল্লাহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, চৌরাস্তা-মতিঝিল ভায়া ইজতেমায় চলাচল করবে।

গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থল, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমা, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমা, মতিঝিল-বাইপাইল ভায়া ইজতেমা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোড-সাভার, ঢাকা-নরসিংদী এবং ঢাকা-কুমিল্লা বিশ্ব ইজতেমা সার্ভিস চলাচল করবে।

৯ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি ও ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি দ্বিতল বাস কাকরাইল মসজিদ সংলগ্ন পয়েন্ট থেকে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমায় পৌঁছানোর জন্য নিয়োজিত থাকবে।

ইজতেমায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলা থেকে শতাধিক চিকিৎসককে আনা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মুসল্লি রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

সংবাদ সংগ্রহে আসা সংবাদকর্মীদের জন্য মিডিয়া সেন্টার ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের (ফ্রি ওয়াইফাই জোন) ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।