Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশ মালয়েশিয়া শিরোপাযুদ্ধ আজ

bangladesh malayজয়ের ক্ষুধা আগের চেয়ে প্রকট, আত্মবিশ্বাসের পালে পাগলা হাওয়ার দোলা। খেলোয়াড়দের চোখ-মুখ ফুটে বেরোচ্ছে স্বপ্নের আভা। ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শিরোপা স্বপ্নে বিভোর পুরো বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে আজ শেষ ভালোর সন্ধানে মামুনুলরা।

‘সবদিক থেকে ম্যাচটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আমরা কিছু একটা অর্জন করতে চাই, জাতিকে কিছু একটা দিতে চাই’— শিরোপার জন্য তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশ দলের মরিয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটল দলের ডাচ কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফের কণ্ঠে।

chardike-ad

প্রথম ম্যাচ হারের পর সমালোচনার জ্বালা সইতে হয়েছে ফুটবলারদের। শ্রীলংকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালের লক্ষ্য অর্জনের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। থাইল্যান্ডকে হারিয়ে রীতিমতো ডানা মেলে আকাশে উড়ছেন স্বাগতিক দলের সদস্যরা। তবে সবার পা মাটিতেই আছে। কেননা এখনো যে মিশন সম্পূর্ণ হয়নি। ডি ক্রুইফের কথায়, ‘দলের সদস্যরা মানসিকভাবে চাঙ্গা, কিছু একটা করতে মরিয়া। সবাই নিজের সেরাটা মেলে ধরতে চায়।’ কঠিন এক ম্যাচ খেলার ধকল কাটিয়ে উঠতে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় চাই, বাংলাদেশ পাচ্ছে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। ফাইনালের আগে এটি নেতিবাচক দিক।

এ সম্পর্কে কোচ বলেছেন, ‘সাবেক ফুটবলার হিসেবে আমি জানি ধকল কাটিয়ে উঠতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্যই ফাইনালের আগে কঠোর অনুশীলনের পরিবর্তে খেলোয়াড়দের নির্ভর রাখতে সম্ভাব্য সবকিছুই করা হচ্ছে।’ সেমিফাইনালের পর দলের সদস্যরা সুইমিংপুলে প্রাণবন্ত সময় কাটিয়েছেন, নিয়েছেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম। ফাইনাল নিয়ে অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেছেন, ‘খেলোয়াড়রা প্রস্তুত, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠে আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এ ম্যাচটা আমরা দেশের জন্য আত্মনিবেদন করা শহীদদের জন্য খেলতে চাই।’ ২০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার তৈরি ট্রফি হাতে তোলার জন্য লড়াইয়ের আগে সেমিফাইনালের ধকল কাটিয়ে ওঠা প্রসঙ্গে মামুনুল ইসলাম বলেছেন, ‘একদিন সময় মোটেও পর্যাপ্ত নয়। তার পরও আমরা ম্যাচের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছি।’ সতীর্থদের মনোভাব সম্পর্কে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘ইতিবাচক দিক হচ্ছে, সেরা ফুটবলার হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে দলের ভেতর। আমাদের একটা ট্রফি প্রয়োজন, বাফুফে সভাপতিও সেটা চান।’

ম্যাচের আগে বাংলাদেশবন্দনা ছিল মালয়েশিয়া কোচ রাজিপ ইসমাইলের কণ্ঠে। বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচের পর থেকে বাংলাদেশের খেলায় উন্নতিটা বিস্ময়কর। আমি আশা করছি, উভয় দল চমত্কার ফুটবলের প্রদর্শনী করবে। ফাইনাল শেষে সেরা দলের হাতেই ট্রফি শোভা পাবে।’

সেমিফাইনালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দর্শক ঠাসা গ্যালারি ছিল স্বাগতিকদের বড় অনুপ্রেরণা। বিপুল দর্শক উপস্থিতি চাপ কিনা— প্রশ্ন করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে মালয়েশিয়া কোচ বলেন, ‘ম্যাচের আগে আমার দল মোটেও চাপে নেই। যখন আপনি এ পরিস্থিতিতে কোনো প্রতিযোগিতায় খেলবেন, চাপ কিন্তু স্বাগতিক দলের ওপরই থাকবে।’ অতিথি দলের অধিনায়ক নাজিরুল নাঈম বলেছেন, ‘আশা করছি, ম্যাচে আমার দল ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করবে, সেরাটা মেলে ধরবে। আমাদের কাজটা মোটেও সহজ হবে না। দলে কোনো সমস্যা নেই। আমি মনে করি, আমার দলের সদস্যরা চাপটা স্বাগতিকদের ওপর ঠেলে দেবে।’

১৯৮৪, ১৯৮৫ ও ১৯৮৯ সালে তিনটি সাফ ফুটবল ফাইনালে হারের জ্বালা। হতাশা কাটিয়ে জয় এসেছিল ১৯৯৯ সালে, নেপালে স্বাগতিকদের হারিয়ে। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে মালদ্বীপকে হারিয়ে আরেকটি সাফ শিরোপা জয় করে বাংলাদেশ।

১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে গ্র্যান্ড রয়্যাল চ্যালেঞ্জ কাপে স্বাগতিকদের হারিয়ে আরেকটি ট্রফি জয়ের উল্লাস করেছিল লাল-সবুজরা। ২০০৩ সালে ভুটানে আমন্ত্রণমূলক প্রতিযোগিতা থেকে আসে আরেকটি সাফল্য। সর্বশেষ ট্রফি ২০১০ সালে, ঢাকায় এসএ গেমস ফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে।

সামির শাকির, অটো ফিস্টার, জর্জ কোটান, জোরান দর্দেভিচের হাত ধরে এ সাফল্য পায় বাংলাদেশ। কোচ হিসেবে লোডউইক ডি ক্রুইফ পারবেন পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করতে? ম্যাচ বাই ম্যাচ স্বাগতিকরা যেভাবে উন্নতি করছে, তাতে শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকেও কঠিন প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে না। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির যোগফল মেলাতে চাই আরেকটি সমন্বিত প্রদর্শনী; যেমনটা ছিল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, শক্তির বিচারে মালয়েশিয়ার সম্ভাবনা ৬০, বাংলাদেশের ৪০। তা উল্টে দিতে পারবে তো বাংলাদেশ!