মানিকগঞ্জের পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চের জানালা দিয়ে আড়াই বছরের মেয়েকে আঁকড়ে ভেসে উঠতে পেরেছিলেন ঢাকার টাইলস মিস্ত্রি মিলন।
বেশ কয়েক মিনিট পানির নীচে থেকেও বেঁচে গেছে মেয়ে।
কিন্তু রোববার বিকেল থেকে সারারাত, আজ সারাদিন নদীর তীর ধরে উদভ্রান্তের মত মিলন ঘুরছেন স্ত্রী লিপির খোঁজে।
খবর পেয়ে কুষ্টিয়ার শশুরবাড়ি থেকে অন্তত জনা বিশেক স্বজন এসে হাজির হয়েছেন পাটুরিয়া ঘাটে। শোকে মাতম করছিলেন নিখোঁজ লিপির মা।
কিভাবে মেয়েকে বাঁচাতে পেরেছিলেন? মিলন জানান, লঞ্চটির দোতলার কেবিনে ছিলেন তারা।
“ট্রলারটি আমাদের বরাবর ধাক্কা মারে।” কিছু বোঝার আগেই লঞ্চটি উল্টে তলিয়ে যায়।
প্রথমেই মিলন তার বাচ্চা মেয়েকে বাঁ হাতে আঁকড়ে জানালা দিয়ে বেরুনোর চেষ্টা করেন। পেছনে থেকে কয়েকজন তার পা, প্যান্ট ধরে টানাটানি করছিলো, কিন্তু বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি।
“আমার মধ্যে তখন শুধু চিন্তা বাচ্চাটাকে বাঁচাতে হবে।”
শেষ পর্যন্ত যখন পানির ওপরে ভেসে উঠতে পারলেন, তখন আঁকড়ে ধরা মেয়ে অচেতন। ধরেই নিয়েছিলেন মেয়েটি বেঁচে নেই। “তারপরও তাকে ছাড়িনি, মরা হলেও সে আমার কাছেই থাকবে।”
পাশ থেকে যাওয়া আরেকটি লঞ্চ থেকে দড়ি ফেলে দিলে, সেটি ধরে মেয়েকে আঁকড়েই তিনি ঐ লঞ্চে উঠে পড়েন। ঐ লঞ্চের কয়েকজন যাত্রী মেয়েটির পা ধরে ঘোরানোর পর মুখ নাক দিয়ে গলগল করে পানি বেরিয়ে আসে।
তীরে গিয়েই একটি সিএনজি অটো নিয়ে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে, সেখান থেকে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ছোটেন মিলন। বেঁচে গেছে তার শিশু মেয়েটি।
পুরো সময়টিতে স্ত্রীর কথা ভাবেননি? তাকে বাঁচানোর কথা মনে হয়নি? বিবিসির এই প্রশ্নে অপরাধীর মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মিলন বললেন, মেয়েকে বাঁচানোর চিন্তা ছাড়া সেসময় কিছুই তার মনে আসেনি।
পদ্মায় রোববারের লঞ্চ ডুবিতে নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭০। তার মধ্যে মহিলা ২৮ জন এবং ১৪ জন শিশু।
সূত্র : বিবিসি