Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ

cricketইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখল বাংলাদেশ। সোমবার অ্যাডিলেড ওভালে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৭৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে রানআউটের শিকার হয়ে বিদায় নিয়েছেন মঈন আলী (১৯)। আরাফাত সানীর বলে সৌম্যর থ্রো থেকে মঈনকে রানআউট করেন উইকেটরক্ষক মুশফিক। দ্বিতীয় উইকেটে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন ইয়ান বেল ও আলেক্স হেলস। তবে হেলসকে সাজঘরে ফিরিয়ে ৫৪ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। ২৭ রান করা হেলসকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন বাংলাদেশের এই সেরা পেসার।

chardike-ad

২৭তম ওভারে ইংলিশ শিবিরে জোড়া আঘাত করেন রুবেল হোসেন। এই ওভারের প্রথম বলে ইয়ান বেলকে (৬৩) মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি করান তিনি। আর ওভারের চতুর্থ বলে ইয়ান মরগানকে সাকিবের তালুবন্দি করান রুবেল। রানের খাতা না খুলতেই বিদায় নেন ইংলিশ অধিনায়ক।

দলীয় ১৩২ রানের মাথায় জেমস টেলরকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকে ইংল্যান্ড। তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাসকিন আহমেদ। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে টেলরকে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ইমরুল কায়েসের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।

এরপর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩১ রান যোগ করে ইংল্যান্ডকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন জো রুট ও জশ বাটলার। এই জুটিতে আঘাত হানেন মাশরাফি। জো রুটকে সাজঘরে ফেরান তিনি। বিদায়ের আগে ৪৭ বলে দুটি চারের মারে ২৯ রান করেন রুট।

এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এনে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। ৮ রানেই ২ উইকেট হারানো দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন এই দুজন। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০৩ রান করেছেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৯ রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে।

দ্রুতই ইমরুল-তামিমের বিদায় : ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। উইকেটের প্রকৃতি বুঝে ওঠার আগেই দলীয় ৮ রানের মধ্যে বিদায় নেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ইমরুল। জেমস অ্যান্ডারসনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে তৃতীয় স্লিপে ক্রিস জর্ডানের তালুবন্দি হন এই ওপেনার (২)। এরপর অ্যান্ডারসনের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে নিজের উইকেট একরকম বিলিয়ে দেন তামিম। স্ট্যাম্পের একটু বাইরের বলে ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো জো রুটের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন তিনি।

প্রতিরোধের পর সৌম্যর বিদায় : শুরুতেই ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকার। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে ভালই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য। তবে দলীয় ৯৪ রানে ক্রিস জর্ডানের একটি বাউন্সার বলে বিদায় নিতে হয় তাকে। লাফিয়ে ওঠা বলটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু বলটি তার গ্লাভসে লেগে উইকেটরক্ষক জশ বাটলারের গ্লাভসে চলে যায়। ৫২ বলে ৪ চার ও এক ছক্কায় ৪০ রান করেন সৌম্য। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৮৬ রান।

দ্রুতই সাকিবের বিদায়: সৌম্যর পর দ্রুতই বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। মাত্র ৬ বল মোকাবিলা করেই সাজঘরের পথে পা বাড়ান তিনি। দলীয় ৯৯ রানে ইনিংসের ২১তম ওভারে মঈন আলীর বলে স্লিপে জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। সাকিবের সংগ্রহ মাত্র ২ রান।

মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি: দ্রুতই সৌম্য ও সাকিব সাজঘরে ফিরলে পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। নিজেদের প্রথম চার বিশ্বকাপে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না বাংলাদেশের। তবে পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে সে স্বপ্নও পূরণ করেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ৪৪তম ওভারে স্টুয়ার্ড ব্রডের বল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে ১ রান নিয়েই সেঞ্চুরি আনন্দে মাতেন মাহমুদউল্লাহ। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি।

রেকর্ড জুটি গড়ে মাহমুদউল্লাহর বিদায় : সেঞ্চুরির পর দলীয় ২৪০ রানে রানআউটের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। তবে তার আগেই ১৩৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ১০৩ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ১৪১ রান সংগ্রহ করেন মাহমুদউল্লাহ। ওয়ানডেতে পঞ্চম উইকেটে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড।

মুশফিকের হল না : ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেও পারলেন না মুশফিক। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে ব্রডের বলে কভারে জর্ডানের হাতে ধরা পড়েন তিনি ( ৮৯)। ৭৭ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ইনিংসটি সাজান মুশফিক।

এই ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে দুটি পরিবর্তন এসেছে। এনামুল হক বিজয়ের বদলে ইমরুল কায়েস এবং নাসির হোসেনের পরিবর্তে আরাফাত সানী একাদশে ঢুকেছেন।

সাম্প্রতিক পারফরমেন্স আর অতীত ইতিহাস বলছে, এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশই। দুই দলের শেষ তিন দেখায় দুটিতেই টাইগাররা জিতেছেন। সবশেষ দেখায় জয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। তাও আবার বিশ্বকাপেই। গত বিশ্বকাপের সে সুখস্মৃতি অনুপ্রেরণাই যোগাবে সাকিব, মুশফিকদের।

এদিকে বিশ্বকাপে খুব নাকাল অবস্থা ইংল্যান্ডের। শেষ দুটি ম্যাচই তাদের বাঁচা-মরার লড়াই। আজ বাংলাদেশের কাছে হারলেই বাড়ি ফেরার বিমানের টিকিট কেটে রাখতে হবে ইংলিশদের। আর কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট হাতে পাবে বাংলাদেশ। টাইগাররা সুযোগ কাজে লাগাতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়!