Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে কেমন করেছিলেন কাদের মোল্লা

kader_molla

বাংলাদেশে সর্বশেষ ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার। আর সেই একই মানবতাবিরোধী অপরাধে এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে ফাঁসির অপেক্ষায় আছেন আরেক জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তাঁর ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

chardike-ad

তাঁর রিভিউ খারিজ হয়ে দণ্ড বহাল আছে। পরিবারের লোকজনও শেষ দেখা করেছেন। এখন পরবর্তী প্রক্রিয়ার অপেক্ষা। আর তাঁর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হলে এটা হবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার অপরাধে দ্বিতীয় ফাঁসি।

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল রিভিউ আবেদন বাতিলের দিন রাতেই।
আর সেই ফাঁসির রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত ছিলেন তখনকার সিভিল সার্জন, ঢাকা জেলা প্রসাশক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, আইজি প্রিজন, জেল সুপার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধি এবং কারা হাসপাতালের চিকিৎসক।

তাদেরই একজন বলেছেন সেই ফাঁসির রাতের কথা। তিনি জানান, সেই দিন রাতে কাদের মোল্লাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পূর্ব পশ্চিম কোনে ফাঁসির মূল মঞ্চে নেয়ার জন্য লাগোয়া কনডেম সেল থেকে বের করা হয়। বের করার আগে চারজন জল্লাদ একজন ইমামের সহায়তায় কাদের মোল্লাকে কালেমা পড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাদের মোল্লা তাদের সহায়তা ছাড়াই নিজে নিজে কালেমা পড়ে তওবা করেন।

কালো জমটুপি পড়ানোর পর কনডেম সেল থেকে পশ্চিম দিকে মূল ফাঁসির মঞ্চে জল্লাদরা কাদের মোল্লাকে নিয়ে যাওয়া শুরু করলে তিনি তখন বেঁকে বসেন। তিনি বার বার জেল সুপারের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন। এরপর অনেকটা পাঁজাকোলে করেই জল্লাদরা কাদের মোল্লাকে মূল ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে রওয়ানা হন। তারপরও মাঝপথে অন্ততঃ তিনবার তিনি জল্লাদদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রতিবারই তিনি জেল সুপারের কথা জানতে চান। জানতে চান তিনি আছেন কী না?

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফাঁসির মঞ্চে উঠতে হয় সিঁড়ি দিয়ে। আর সেই সিড়ির পাঁচটি ধাপ। এই সিড়ি থেকে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির মঞ্চে তুলতে জল্লাদদের বেশ বেগ পেতে হয় তখন, তাঁরা অসহযোগিতার কারণে।

ফাঁসির মঞ্চের মাঝখানে গোল গভীর ১২ ফুট গর্ত। আর উপরে আট ফুট। গর্ত ঢাকা থাকে কাঠ দিয়ে। আর সেই কাঠের মাঝখানে দণ্ডিতকে দাঁড় করানো হয়। ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় কাঠ টেনে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু কাদের মোল্লা তখন এমনভাবে দাড়ান যে, তাঁর দুই পা গর্তের বাইরে থাকে। বারবার বলার পরও তিনি দুই পা এক করছিলেন না। তখন জল্লাদরা তাঁর দু’পা টেনে এক করে সাদা কাপড় দিয়ে বেঁধে দেন। এরপর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই কর্মকর্তা জানান, ‘ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর কাদের মোল্লার মৃতদেহ যখন উপস্থিত কর্মকর্তাদের সামনে টেবিলে রাখা হয় তখন দেখা যায় তার জিভ বের হয়ে গেছে। মুখ থেকে রক্ত বেরিয়েছে।’

এরপর নিয়ম অনুযায়ী কারাগারের মর্গে নিয়ে তার হাত-পা ও ঘাড়ের রগ কেটে দেয়া হয়। তারপর ময়না তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। তখন রাত প্রায় আড়াইটা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কারাগারে এখন ১,২৪২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। কারা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এপর্যন্ত ৪২৮ জনের মুত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে ১৯৭৭ সালে এক বছরে সর্বোচ্চ ২৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

সুত্রঃ দেশে বিদেশে