Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

kamruzzamanজামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন বিচার শুরু হয়েছিল।

প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন। একাত্তরের ২২ এপ্রিল তিনি জামালপুরের আশেক-মাহমুদ কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আল-বদর বাহিনী গড়ে তোলেন।

chardike-ad

এ বাহিনী বৃহত্তর ময়মনসিংহে (ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল) গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করে।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ হলো :

প্রথম অভিযোগ :
এতে বলা হয়েছে, ৭১’র ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আল-বদররা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে জেলার নালিতাবাড়ী থানার কালীনগর গ্রামে ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সারারাত নির্যাতন করা হয়। পরদিন আহম্মদনগরের রাস্তার ওপরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টেনে নিয়ে কাছাকাছি কাঠের পুলের নিচে পানিতে ফেলে দেয়া হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ :
কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে মাথা ন্যাড়া করে উলঙ্গ অবস্থায় গায়ে ও মুখে চুনকালি মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে শেরপুর শহর ঘোরায়।

তৃতীয় অভিযোগ :
৭১’র ২৫ জুলাই ভোর বেলায় কামারুজ্জামানের পরিকল্পনা ও পরামর্শে রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১২০ জন পুরুষকে ধরে এনে হত্যা করে। এ সময় ধর্ষণের শিকার হন গ্রামের মহিলারা। ওই ঘটনার দিন থেকে সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত।

চতুর্থ অভিযোগ :
৭১’র ২৩ আগস্ট মাগরিবের নামাজের সময় গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাকে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে বসানো আলবদর ক্যাম্পে রাখা হয়। মোস্তফার চাচা তোফায়েল ইসলাম এরপর কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার ভাতিজাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই রাতে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা গোলাম মোস্তফা ও আবুল কাশেম নামের আরেক ব্যক্তিকে মৃগি নদীর ওপর শেরি ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে। গুলিতে গোলাম মোস্তফা নিহত হলেও হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যায় আবুল কাশেম।

পঞ্চম অভিযোগ :
মুক্তিযুদ্ধকালে রমজান মাসের মাঝামাঝি এক সন্ধ্যায় কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাদের নির্যাতনের পর থানায় চারদিন আটকে রাখা হয়। পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে ওই দু’জনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পরে লিয়াকত, মুজিবুরসহ ৮ জনকে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের কাছে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ষষ্ঠ অভিযোগ :
৭১’র নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।

সপ্তম ও শেষ অভিযোগ:
মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান দিন দুপুরে কামারুজ্জামান আল-বদর সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন সকালে আলবদররা ওই দু’জনসহ সাতজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে হাত বেঁধে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করান। প্রথমে টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফ দেন। আল-বদররা গুলি করলে তার পায়ে লাগে। তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে আরও বলা হয়েছিল, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১, ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে গত বছর ৩ নভেম্বর রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

সোমবার কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেয়।