Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কেন মমতা প্রথমে নারাজি হয়েও আবার রাজি হলেন?

Mamata-Modiভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার সঙ্গী হবেন কি না, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। একটা সময় মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি যেতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত মোদির হস্তক্ষেপে বরফ গলেছে। নতুন করে কোনো অঘটন না ঘটলে ৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা যাবেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন মমতা প্রথমে নারাজি হয়ে এবার রাজি হলেন?

chardike-ad

কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকা এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখানে প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

মোদি আজ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক রাজ্য। এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢাকা যাওয়ার ব্যাপারে আমি প্রথম দিন থেকেই অনুরোধ করেছি। মমতা যেতে সম্মত হয়েছেন, এই সংবাদে আমি খুশি।’’

এর আগে ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহ যখন ঢাকা গিয়েছিলেন, তখন শেষ মুহূর্তে যেতে রাজি হননি মমতা। তার একটা কারণ ছিল, মমতার সঙ্গে আলোচনা না-করেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনাকে কথা দিয়েছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় কারণ হল, অাসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যে মনমোহনের সফরসঙ্গী হচ্ছেন, সেটা মমতাকে আগাম জানানো হয়নি।

মোদি কিন্তু প্রথম থেকেই খুব সাবধানী। পাকিস্তান বাদ দিয়ে প্রায় সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র সফর করে ফেলেছেন তিনি।

কিন্তু বাংলাদেশে যাচ্ছেন সবার শেষে। তার কারণ একটাই। মমতার সঙ্গে আলোচনা না-করে বাংলাদেশের ব্যাপারে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে চাননি তিনি। মমতার সঙ্গে মোদির একান্ত বৈঠক হয়েছে দু’বার। এক বার সংসদে আর এক বার রাজভবনে। দু’বারই বাংলাদেশ নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে শীঘ্রই বাংলাদেশ যাচ্ছেন, সেটা সম্প্রতি রাজভবনের বৈঠকেই মমতাকে জানান মোদি। সেখানেই বিশেষ ভাবে মমতাকে অনুরোধ করেন সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য।

মমতাও জানিয়ে দেন, নীতিগত ভাবে তিনি বাংলাদেশ যেতে সম্মত। এমনকি, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল নিয়েও সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দেন তিনি। বস্তুত, এই চুক্তি স্বাক্ষরের কর্মসূচি নিয়েই এ বার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যতটা জমি হস্তান্তর হবে, তার বেশির ভাগই যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তাই মোদি চাইছিলেন এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মমতা তাঁর সঙ্গে থাকুন। মোদির সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন ও বাস পরিষেবা শুরু করা হবে। এই সব প্রকল্পের ব্যাপারেও রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

কিন্তু এর পর কী এমন হল যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসূচি ঘোষণা করার পরে মমতা জানিয়ে দিলেন, তিনি যেতে পারবেন না! মমতার সফরের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গতকালই রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে ফোন করেছিলেন বিদেশসচিব জয়শঙ্কর। মুখ্যসচিব তাঁকে বলেন, এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, ৬-৭ জুন জেলায় কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।

নবান্ন সূত্র বলছে, পরিস্থিতি জটিল করে তোলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সাম্প্রতিক কলকাতা সফর। সেখানে রাজনাথ বলেন, খুব শীঘ্রই তিস্তা চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী। ক্ষুব্ধ মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, তার মানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় তিস্তা চুক্তি সই করে ফেলতে পারেন। সুতরাং তাঁর ঢাকা না যাওয়াই শ্রেয়।

আজ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, তিনি ঢাকায় গিয়ে তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। ওই চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন একমত নন, তখন শুধু বাংলাদেশের কথায় তিনি চুক্তি করবেন, এটা হতেই পারে না। রাজনাথও এ দিন বলেন, এই সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে এমন কথা তিনি বলতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে এই চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।

মমতা আজ বলেন, ‘‘আমি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে তো চুক্তি করা উচিত নয়।’’ মমতা জানান, তিস্তার জলপ্রবাহ খতিয়ে দেখতে কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘অতীতে যে চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি আছে। সেগুলি মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন। আমি নিজে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার বক্তব্য জানিয়ে এসেছি। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কোনও রকম নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। কিন্তু আলাপ-আলোচনা না-করে একতরফা কিছু করলে আমরা সেটা কিছুতেই মানতে পারব না। কারণ, আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সবার আগে।’’

আর একটি বিষয় নিয়ে মমতার সঙ্গে কেন্দ্রের মতপার্থক্য হয়েছিল। জয়শঙ্কর মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত করতে হবে। মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই চুক্তি রূপায়ণে তিনি দায়বদ্ধ। কিন্তু ৩০ জুলাইয়ের মধ্যেই সমস্ত মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তার জন্য আনুষঙ্গিক সাহায্য যা দরকার, তা-ও কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও আসেনি। গত কাল প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য রাজ্যকে সব রকম সাহায্য করবে কেন্দ্র।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে সিবিআই নতুন করে নাড়াচড়া করার ফলেই মমতা বাংলাদেশ যেতে রাজি হলেন কি না, তা নিয়েও অবশ্য জল্পনা শুরু হয়েছে। গত কালই সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে যে, তৃণমূলের আয়ের উৎস নিয়ে তদন্ত চলছে। তাদের আয়ব্যয় নিয়ে যে সব নথি তৃণমূল জমা দিয়েছে, সেগুলি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়, সিবিআই-কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মমতা সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে কেন্দ্র।

তবে এই চাপের ফলেই মমতার মত বদল, এমনটা মানতে নারাজ তৃণমূল সূত্র। তাঁদের বক্তব্য, মমতার বাংলাদেশ সফরে মূল কাঁটা ছিল তিস্তা চুক্তি। কোনও রকম চাপ দিয়ে এ ব্যাপারে মমতাকে নতিস্বীকার করানো সম্ভব নয়। আজ মোদির পক্ষ থেকে চলতি সফরে তিস্তা চুক্তি না-করার আশ্বাস মেলার পরেই বাংলাদেশ যেতে রাজি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ও বলছে, মোদির পক্ষ থেকে আজ মমতাকে জানানো হয়েছে, সিবিআই তাদের মতো তদন্ত করবে। এটার সঙ্গে বাংলাদেশ সফরকে যুক্ত করা অন্যায়।