Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাবা-মাকে মুস্তাফিজের উপহার

mostafizপ্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে আরেকটি ৫ উইকেট-কাণ্ড ঘটিয়ে ছেলে রূপকথার গল্পের নায়ক হয়ে যাবেন, এমন আশা নিশ্চয়ই মুস্তাফিজুর রহমানের বাবা-মাও করেননি। তবু সাতক্ষীরা থেকে তাঁরা ছুটে এসেছেন ছেলের খেলা দেখতে। মাঠে লাল-সবুজ জার্সি পরে ছেলে দেশের হয়ে খেলছেন, এই দৃশ্য দেখাও তো অনেক!

কিন্তু মুস্তাফিজ ভাবলেন অন্যভাবে। যে সিরিজ বিশ্ব ক্রিকেটের বিশাল ক্যানভাসে তুলে ধরেছে তাঁর ছবি, সেই সিরিজে বাবা-মার জন্য কিছু করবেন না? অসুস্থ শরীর নিয়েও যে বাবা ছুটে এলেন মাঠে, তাঁকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেবেন? মুস্তাফিজ তাই অন্য ছক আঁকলেন। রেকর্ডের হাতছানি সামনেই ছিল। সেটিকে বাস্তব করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসা বাবা-মাকে দিলেন অনন্য এক উপহার।

chardike-ad

রোহিত শর্মাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ভারত ইনিংসে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন। পরে বোল্ড করলেন সুরেশ রায়নাকেও। বাংলাদেশের ১৯ বছর বয়সী তরুণ বাঁহাতি পেসার ততক্ষণে ইতিহাস। ১৩ উইকেট নিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক। অবশ্য এক সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে হ্যারিসও পেয়েছিলেন ১৩টি উইকেট। তবে সেই সিরিজটা ছিল পাঁচ ওয়ানডের।

ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ওয়ানডেতেও কোনো বোলারের জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। কালকের আগ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ১১ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ছিল চার বোলারের। অস্ট্রেলিয়ার রায়ান হ্যারিস, দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্টি থেরন ও ইমরান তাহির এবং জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটরি। কাল রোহিতকে ফিরিয়ে তাঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে একাই শীর্ষে চলে গেলেন মুস্তাফিজ। পরে রায়নার উইকেটটিও নিয়ে আরও শক্ত করেছেন নিজের রেকর্ড।

তিন ম্যাচের সিরিজে এর আগে সর্বোচ্চ উইকেট ছিল ১২টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ভ্যাসবার্ট ড্রেকসের সঙ্গে সেই রেকর্ডে ভাগ ছিল বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মুর্তজারও। ২০০২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ডটা প্রথম করেন ড্রেকস। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে সিরিজে তা স্পর্শ করেন মাশরাফি। কাল মুস্তাফিজ ছাড়িয়ে গেলেন দুজনকেই। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডের পর কালকের দুটি বিশ্ব রেকর্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটাকে আরও রঙিন করে দিল তাঁর জন্য।

তবে কালকের বোলিং বিশ্লেষণটা মুস্তাফিজ সম্পর্কে ভুল বার্তাই দিতে পারে। নিজের প্রথম ৮ ওভারে ৩৭ রান দিলেন, শেষ ২ ওভারে রায়না-স্টুয়ার্ট বিনিরা মিলে নিয়ে নিলেন ২০, যার ১২ রানই এসেছে তিনটি অপ্রত্যাশিত বাউন্ডারিতে। কোনোটা ব্যাটের কানায় লেগে, কোনাটা বা ফিল্ডারের ভুলে।

জোড়া রেকর্ডের ম্যাচটা অবশ্য স্মরণীয় হলো না মুস্তাফিজের জন্য। হলো না ৩-০, হলো না আরেকটি বাংলাওয়াশের স্বপ্নপূরণ। তবে ভারতের বিপক্ষে ২-১-এ সিরিজ জেতাও তো কম নয়। তা ছাড়া অভিষেক সিরিজেই একটার পর একটা রেকর্ড গড়ে মুস্তাফিজও ঢুকে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। বাংলাদেশের জরাজীর্ণ পেস আক্রমণকে দেখিয়েছেন নতুন দিনের সূর্য।