বাংলাদেশে ১৬কোটি মানুষের চোখের মনি আমাদের ক্রিকেটাররা, আর তাদের মাঝেও যেন সবচেয়ে বেশি পছন্দের একজন, তিনি ‘মাশরাফি’। যেন লক্ষ্য তারার মাঝে একমাত্র চাঁদ।
একজন মাশরাফি! একজন অধিনায়ক, একজন বড়ভাই, একজন বাবা বা একজন মানুষ! কোন সংজ্ঞাটা বেশি সহজ আপনার কাছে?
একজন বড়ভাই মাশরাফিকে আপনি কতটা চেনেন, একজন বাবা মাশরাফিকে আপনি কতটা বোঝেন, একজন মানুষ মাশরাফিকে আপনি কতটা পড়তে পারবেন বা একজন অধিনায়ক মাশরাফিকে আপনি কিভাবে দেখবেন?
একজন বড়ভাই, যিনি মুহূর্তের ভুলে যান তিনি দুই মিনিট আগে নাসির বা তাসকিনকে বকা দিয়েছিলেন, কিন্তু দুই মিনিট পরেই বুকে টেনে নেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। খেলার মাঠে ও মাঠের বাইরে তিনি আগলে রাখেন তার দলকে। কোন খারাপ কিছু যেন তার স্নেহের ভাইগুলোকে ছুঁতে না পারে। ড্রেসিং রুমেও তিনি মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। কেউ মন খারাপ করে থাকবে কেন এটাই তার প্রশ্ন!
একই সাথে তিনি একজন বাবা, যিনি ছেলের অসুস্থতায় সারারাত জেগে থাকেন, ছেলের কষ্টে নিজে ঘুমান না। বাবা ভক্ত মেয়ের আবদার পূরণে বাইক নিয়ে বের হয়ে যান যখন তখন। ছেলের অসুস্থতার খবরে একা একা চোখের পানি ফেলেন।
কখনোবা তিনি একজন অধিনায়ক, যিনি কি করলে দলের ভাল হবে এই ভেবে ম্যানেজমেন্টের বিপক্ষেও কথা বলতে পিছপা হননা। ম্যাচের শেষ মুহুর্তে চিন্তায় পায়চারি করেন। কোন সদস্যকে তিনি কাজে লাগাতে পারবেন সেটা বুঝে অন ফিল্ড মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন এবং সফল হন। খারাপ কে খারাপ , ভালোকে ভালো বলার সৎ সাহস রাখেন। কোন কিছুর কাছে দলের ভালো বিসর্জন দেন না।
মাশরাফির এসব দিক পড়ে ফেলার বা জানার অনেক পথ পাবেন কিন্তু একজন মানুষ মাশরাফিকে জানার, পড়ার, বোঝার ক্ষমতা হয়তো বিধাতা আমাকে বা আপনাকে দেননি। একজন মানুষ মাশরাফিকে পড়ার জন্য আপনাকে হয়তো তাকে নিয়ে গবেষনা করতে হবে না আবার হয়তো গবেষণা করেও কিছু পাবেন না। একজন খারাপ মানুষকে আমরা এক কথায় প্রকাশের মতো বলে দিতে পারবো, ‘তিনি খারাপ’। কিন্তু একজন পরিপূর্ণ ভালো মানুষের সংজ্ঞা হয়তো এখনো আমাদের অজানা।
একজন মাশরাফিকে দূর থেকে দেখেছি ২০০১ সাল থেকে মাঠ মাতাতে। একজন মাশরাফিকে দেখেছি ব্যাথায় কাতরাতে, একজন মাশরাফিকে দেখেছি বিশ্বকাপে না খেলতে পেরে অভিমানে, কষ্টে কাঁদতে।
কিন্তু একজন মাশরাফিকে যখন কাছে থেকে দেখার বা জানার সুযোগ পেয়েছি আমি নিজের অক্ষমতা ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আমি নিজেকে ধিক্কার দেই কিভাবে একজন মাশরাফিকে জানার সাহস হলো আমার! একজন মাশরাফি সামান্য এক ভক্তের সাথে দেখা করতে মাঠে চলে আসেন, একজন মাশরাফি সামান্য একজন ভক্তের দেওয়া চকলেট বাচ্চাদের মতো লুফে নেন, একজন মাশরাফি উদ্বিগ্ন হন তার জন্য কোন ভক্তকে যেন রোদে কষ্ট করতে না হয়, একজন মাশরাফি জিমনেশিয়্যাম থেকে বের হয়ে ভক্তদের সাথে মজা করেন – আড্ডা দেন, একজন মাশরাফি তার ছোট বেলার মজার কাহিনীগুলো তার ভক্তের সাথে অকপটে বলে ফেলেন। সেই একজন মাশরাফিকে চিনতে বা জানতে চাওয়ার মতো সাহস আমার কি করে হলো এটা ভেবেই অবাক হই।
এই একজন মাশরাফি শুধু মাশরাফি হলে তো এত কিছু বলার প্রয়োজন হতো না, সমস্যাটা তিনি নিজেই বাঁধিয়েছেন। পুরো দেশের স্বপ্নের, শক্তির, ভালোবাসার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। আর এই দায়িত্বের ভারে কখনো হয়েছেন গুরু, কখনো বস, কখনো ম্যাশ আবার কখনো কৌশিক হয়ে থেকেছেন আপনদের মাঝে। একজন মাশরাফি হয়তো যুগে যুগে আসবেনা, কিন্তু একজন মাশরাফির আদর্শ টিকে থাকুক যুগে যুগে।