Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কুমারী পুজোয় দেবীর মর্যাদায় মুসলিম মেয়ে

barshaমুসলিম ঘরের মেয়ে এ বারের পুজোয় কুমারী হবে কালনায়৷ কেউ আঁতকে ওঠেনি৷ শুধু মেনে নেওয়া নয়, ধন্য ধন্য করছেন কালনার মানুষ৷ আর বালিকার পরিবার বিভোর মেয়ের দেবী রূপের কল্পনায়৷ ভগবানের আর্শীবাদ বলেই তাঁরা মনে করছেন নিজেদের মেয়ের এই মর্যাদায়৷ পুজো আর দু’দিন পর৷ বইয়ের পাতা ছেড়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা খাতুন এখন মায়ের কাছে শিখতে চাইছে পুজোর সময় তাঁর করণীয় সম্পর্কে৷

মা ফিরোজা বিবি পড়েছেন বিড়ম্বনা৷ পুজোর নিয়মকানুন কিছুই জানেন না৷ কখনও কাছে থেকে দেখাও হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘আমি কি ছাই, এ সব জানি?

chardike-ad

ঘুরতে-ফিরতে জিজ্ঞাসা করছে, মা কেমন করে আমার পুজো হবে? আমাকে কি করতে হবে? যতটা জানি, তাই বলছি৷ কখনও প্রতিবেশি কারও কাছে জেনে বলছি৷ খুশিতে আর ধরে না আমার মেয়েটার৷’

তাকে কুমারী পুজোর প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন কালনার কাঁসারিপাড়ার এক সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ষষ্ঠী মল্লিক৷ পেশায় চিকিত্‍সক তিনি৷ ওই সেবা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যে বারোয়ারি পুজো হয়, তাতেও কুমারী হিসেবে ষষ্ঠীবাবু বেছে নিয়েছিলেন বর্ষা খাতুনকে৷

কুমারী পুজোর জন্য ব্রাক্ষ্মণ কন্যাকে বেছে নেওয়াই প্রচলিত রেওয়াজ৷ তাহলে কোন সাহসে মুসলিম ঘরের মেয়েকে বাছলেন ষষ্ঠীবাবু? সমাজের চোখরাঙানির কথা ভাবেননি? হাসেন সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার৷

তিনি বলেন, ‘ধর্ম আলাদা হোক, ভগবান তো একই৷ সমাজ যেভাবে ভেঙেচুরে যাচ্ছে, তাতে আর যাই হোক, মানুষের মঙ্গল হবে না৷ সোজা পথের দিশা দেখাতে হলে এটা একটা পথ মাত্র৷

পরস্পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে বর্ষাকে মাতৃরূপে পুজো করবো বলে ঠিক করি৷’ বর্ষাকে তিনি প্রথম দেখেন সেবা প্রতিষ্ঠানের দাতব্য চিকিত্‍সালয়ে৷

মুসলিম ঘরের বধূ ফিরোজা বিবি বলেন, ‘মেয়ের চিকিত্‍সা করাতে ডাক্তারবাবুর কাছে যেতাম৷ তিনিই আমার মেয়েকে পুজো করার প্রস্তাব দেন৷ আমি তো প্রথমে ভেবেই পাইনি, কি করবো৷ ওর বাবাকে বলি৷ তিনি বলেন, দাদাকে জিজ্ঞাসা কর৷

ভাসুরকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি এক কথায় রাজি হন৷’ হ্যাঁ, ধর্মের গোঁড়ামি আচ্ছন্ন করেনি বর্ষার জেঠু তাহের হোসেনকে৷ তিনি বলেন, ‘শুনেই বলেছিলাম, খুবই ভালো প্রস্তাব৷ ধর্মে ধর্মে তো কোনও ভেদ নেই৷ তাই সম্মতি দিয়েছিলাম৷’

সমাজের চোখরাঙানোর কথা ভাবেননি তাহের কিংবা তাঁর ভাই আমেদ হোসেনও৷

দুর্গাপুজোর আয়োজক ষষ্ঠী মল্লিক ও রোজ নমাজ পড়তে অভ্যস্ত তাহের-আমেদরা কোথাও যেন এক হয়ে গিয়েছেন৷

উভয়ের কাছেই ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেই৷’ কালনার পরিবেশটাই এমন৷ স্থানীয় বাসিন্দা বাবুলচন্দ্র বাড়ুই বলেন, ‘দেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে এর চেয়ে ভালো উদ্যোগ আর হয় না৷’

সুত্রঃ এই সময়