আম্পায়ারের পরিচয়ের আড়ালে অবশ্য অদৃশ্য হয়ে গেছে তাঁর লেগ স্পিনার পরিচয়টাই। ১৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে আইসিসির এলিট প্যানেলের এ আম্পায়ারের। পেয়েছেন ১১ উইকেট। তবে এই পরিচয় আলীম দার নিজেই দেন না। খেলোয়াড়ি জীবনটা যত অনুজ্জ্বল ছিল, ততটাই শত গুণ উজ্জ্বল আম্পায়ারের জীবনটাই।
অনুশীলনে’র পর দেখা মিলল আরেক মজার দৃশ্য। আম্পায়ারদের ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন আলিম। তখন তামিম ইকবাল রসিকতা করেই তুলে দিলেন তর্জনী! ২২ গজে এই আলিম ব্যাটসম্যানদের ‘মৃত্যু’ ঘোষণা করেন। মওকা পেয়ে তামিম আউট করে দিলেন আলিমকে! বল করলেন, আউটও হলেন! এই প্রথম ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো বোলার বোধ হয় আউট হলো! কিংবা এও তো বলা যায়, এই প্রথম ক্রিকেট ইতিহাসে আউট হয়ে গেলেন কোনো আম্পায়ারই!
কদিন আগেও আলিম দার নামটা খুব একটা খুশি মনে শুনতে রাজি ছিলেন না বাংলাদেশ সমর্থকেরা। মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালের কয়েকটি সিদ্ধান্তের কারণে ইয়ান গোল্ড সঙ্গে আলিম দার ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে সমালোচিত। পরে সেমিফাইনাল থেকে আলিম দারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়েও নিয়েছিল আইসিসি।
কদিন আগে ভারতে আবারও তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হন আলিম। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম তিনটি ওয়ানডেতে ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। করার কথা ছিল সিরিজের বাকি দুটি ওয়ানডেতেও। কিন্তু উগ্রপন্থী সংগঠন শিবসেনার বিক্ষোভের মুখে আলিমকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি আইসিসি। এ কারণে ২২ ও ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চতুর্থ ও পঞ্চম ওয়ানডে থেকে পাকিস্তানি আম্পায়ারকে ফিরিয়ে নিয়েছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। আলিম দার আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন বাংলাদেশকে দিয়েই।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং শুরু। গত ১৫ বছরে অসাধারণ আম্পায়ারিংয়ে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য পর্যায়ে। ২০০৯, ২০১০, ২০১১-টানা তিন বছর হয়েছেন আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার। এ কারণে, আইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে আলিম দার যেন এক নিয়মিত নাম।
তবে বাংলাদেশ-ভারতের কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, নিরাপত্তা সমস্যায় ভারত ছাড়া—এ বছরটা খারাপই গেল আলিম দারের। এ সিরিজ দিয়ে শুরু হতে পারে তাঁর নবযাত্রা। মাঠের দর্শকরাও আলিমের বোলিংকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, পুরোনো তিক্ততা ভুলে অতিথিকে বরণ করে নিতেই জানে বাংলাদেশ। গত ভারত সফরের মতো অন্তত নিরাপত্তার অভাব বোধ করার কোনো কারণই নেই।