Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নতুন ৬ দিগন্তে ডানা মেলবে বাংলাদেশ বিমান

biman-bangladeshনতুন বছরে আরও ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিমান। রুটগুলো হল- কলম্বো, মালদ্বীপ, গুয়াংজু, হংকং, দিল্লি ও ভুটান। আর ২০১৭ সালের পরিকল্পনায় রয়েছে আরও ৪টি আন্তর্জাতিক রুট। এগুলো হল- নিউইয়র্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নারিতা। আগামী মাসে উদ্বোধন হবে ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট।

সম্প্রতি বিশ্বসেরা বোয়িং কোম্পানি থেকে কিনে আনা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট ‘ময়ূরপঙ্খী’ ও ‘মেঘদূত’ দিয়ে এ রুট চালু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ জানুয়ারি এয়ারক্রাফট দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। নতুন আনা বোয়িং দুটি মিলে বর্তমানে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ১৪টি। আর যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক রুটের সংখ্যা ১৫টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের সবগুলো অভ্যন্তরীণ রুটে এখন বিমানের ফ্লাইট চলছে। শিগগিরই বিমানবহরে যুক্ত হবে আরও দুটি উড়োজাহাজ। ইতিমধ্যে এজন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

chardike-ad

বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বিমান এখন লাভের মুখে ফিরেছে। লোকসানের দুর্নাম ঘুচিয়ে নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ডানা মেলবে বিমান। আরও ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত এ বিমান সংস্থা। তিনি বলেন, ‘আকাশে শান্তির নীড় স্লোগান’ নিয়ে বাহাত্তরের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বিমানের জন্ম। আগামী ২ বছরের মধ্যে বিমানের টার্গেট ২৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাওয়া। ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট পরিচালনার জন্যও বিমান এখন প্রস্তুত। শুধু প্রয়োজন সিভিল এভিয়েশনের আপগ্রেডেশন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এ বছরের মধ্যেই এটা সম্ভব হবে।

জামাল উদ্দিন আরও বলেন, বোয়িং কোম্পানির ৬টি ব্র্যান্ড নিউ উড়োজাহাজ এখন বিমানের বহরে আছে। আরও ৪টি নতুন ড্রিমলাইনার যুক্ত হবে বিমানবহরে। এটা সম্ভব হলে বিমান হবে স্বপ্নের এয়ারলাইন্স। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসে বিদেশী পার্টনার সংযোগের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এরপর আর লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ে যাত্রী দুর্ভোগ থাকবে না। এয়ারক্রাফট হ্যান্ডেলিংয়েও বিমান হবে আন্তর্জাতিকমানের। সিডিউল অন টাইম করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বছর রেকর্ডসংখ্যক ১৭ লাখ যাত্রী টেনেছে বিমান। তাতে লাভের অংক দাঁড়িয়েছে ২৭১ কোটি টাকা। এর আগের দুই বছর ব্রেক ইভেনে ছিল বিমান। আগামী বছর লাভের পরিমাণ ৫০০ কোটি ছাড়ানোর টার্গেট রয়েছে। বিমান চেয়ারম্যানের মতে, বিমানের জন্য এ বছরই হবে কর্পোরেট বিজনেসের সেরা মডেল।

বিমানের পরিচালক প্রশাসন ডক্টর সাফিকুর রহমান জানান, আগামী মাসে কলম্বো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। নতুন দুটি ৭৩৭ দিয়ে অপারেট করা হবে নিকট গন্তব্যের রুটগুলো। পরিকল্পনায় রয়েছে নিউইয়র্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নারিতা রুট চালু করা।

পরিচালক কাস্টমার সার্ভিস আতিক সোবহান বলেন, সিডিউল অন টাইম করা ও ইন ফ্লাইট সার্ভিসকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিজনেস ক্লাস থেকে শুরু করে ইকোনমিক ক্লাসের সব ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়ানো হয়েছে।

উপ-মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ ও বিএফসিসি (ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার) খান মোশাররফ হোসাইন বলেন, বিমানের প্রতিটি ফ্লাইটে এখন আন্তর্জাতিক মানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি পাওয়ায় মালয়েশিয়াসহ ৪টি এয়ারলাইন্স এখন বিমান থেকে খাবার নিচ্ছে। আরও ২/৩টি বিদেশী এয়ারলাইন্স বিমান থেকে খাবার ক্রয়ের ব্যাপারে আলোচনা করছে।

বিমানের সিইও কাইল হেউড বলেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বিমানবহরে এয়ারক্রাফটের সংখ্যা ২৪টি করার টার্গেট রয়েছে। তার মতে, বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও মর্যাদাবান এয়ারলাইন্স করতে হলে অবশ্যই বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তার জন্য এ বছর বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সিডিউল ঠিক রাখা। গত অর্থবছরে বিমান লাভ করলেও লাগেজ সার্ভিস ও সিডিউল অন টাইম না করার সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

জানা গেছে, ২০ বছরে মাত্র ৭ বার লাভের মুখ দেখেছে বিমান। এর মধ্যে ২০০৩-০৪ সালে তিন কোটি ৫০ লাখ, ২০০৭-০৮ সালে পাঁচ কোটি ৯১ লাখ এবং ২০০৮-০৯ সালে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লাভ হয়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য বিমানের প্রধান কার্যালয় থেকে আউট স্টেশনের প্রতিটি শাখায় ছিল অনিয়ম-দুর্নীতি। জন্মলগ্ন থেকে দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেটটি ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। তবে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসেবে এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিনের যোগদানের পর দুর্নীতি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বিমানের আন্তর্জাতিক স্টেশনগুলোতে শত শত কোটি টাকার লাগেজ কেলেংকারির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থান নেন। বোর্ড সাব-কমিটি গঠন করে আন্তর্জাতিক স্টেশনগুলোর দুর্নীতি তদন্ত করান। মূলত গত অর্থবছরে বিমানের লাভের অন্যতম কারণ হচ্ছে- এই অ্যাকসেস ব্যাগেজ কেলেংকারি বন্ধ হওয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান বোর্ডের একজন প্রভাবশালী সদস্য বলেন, এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিনের সাহসী ভূমিকার কারণে বিমানে লাভের যে ধারা শুরু হয়েছে এটা আর বন্ধ হবে না। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জ্বালানি সাশ্রয়ী অত্যাধুনিক বোয়িং বিমানবহরে যোগ হয়েছে। বাদ পড়েছে জ্বালানি খেকো চারটি পুরনো ডিসি-১০ উড়োজাহাজ। বন্ধ করা হয়েছে রোম-জার্মানিসহ লোকসানি অনেকগুলো রুট। তার মতে, এটা সম্ভব না হলে এত দিনে বিমান দেউলিয়া হয়ে যেত।