Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

usa-bg20160610193721হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য, এর প্রতিদান আমি নিজেই দেব।’ অর্থাৎ রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য। শুধু আল্লাহর ভয়েই বান্দা পানাহার থেকে বিরত থাকে। নইলে পৃথিবীর পাওয়ার হাউস বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অপরাপর দেশগুলোর মুসলমানরা কোন শক্তির ভয়ে গোপনে এক ঢোক পানিও পান করার সাহস পান না? বস্তুত অবিনশ্বর এক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় অর্ধকোটিরও বেশি মুসলমানের দেশ আমেরিকার মুসলমানরা পালন করেন সিয়ামব্রত।

রমজান মাসে হোয়াইট হাউসের দেশটিতে এক বিশেষ রূপ পরিদৃষ্ট হয়। দেশটির মুসলমানরা মহিমান্বিত এ মাসকে সাদরে বরণ করে নেন। ব্যাপকভাবে আমেরিকানদের মাঝে পড়তে থাকে রমজানের প্রভাব। নানাবিদ সঙ্কট ও সমস্যা কাটিয়ে কোন পরিস্থিতিতে, কী করে মুসলমানরা সিয়ামব্রত পালন করেন- এ নিয়ে সাধারণ অমুসলিম আমেরিকানদের ভাবনার অন্ত নেই। ফলে সবকিছু বাদে রোজাদারদের সম্মানে এগিয়ে আসেন তারা।

chardike-ad

রমজানের আগমনে আমেরিকার মুসলমানদের যেন আনন্দের সীমা থাকে না। বৃহৎ এ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে রোজার সময়ের বেশ তারতম্য থাকলেও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে মুসলিম স্কলাররা সহজভাবে এ সঙ্কট উত্তরণে এগিয়ে আসেন। তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রমজানের সময়টাতে ইসলামি আবহ তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

আমেরিকান মুসলমানদের জন্য সবচে দুষ্কর ব্যাপার হচ্ছে হালাল গোশতের দুষ্প্রাপ্যতা। তারা দূর-দূরান্তে গিয়ে হালাল গোশতের সন্ধান করেন। এ জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। এদিকে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার ফলে মুসলিম রেস্টুরেন্টের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানকার বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করা হয় এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও রেস্টুরেন্টগুলো অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখা হয় ইফতার পার্টির জন্য। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মুসলিম কমিউনিটিতে উৎসব আমেজ চলতে থাকে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত।

বাংলাদেশে রমজানের আগে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, আমেরিকায় তা হয় না। বরং বাংলাদেশি দোকানের মালিকেরা রীতিমতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে রমজানে পণ্যের দাম কমিয়ে দেন। অন্যদিকে যেসব রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রী তৈরি হয়, তা আমেরিকার খাদ্যমান অনুযায়ী তৈরি করা হয়। দেশটিতে খাদ্যমান বজায় রেখে তা তৈরি করতে রেস্টুরেন্ট মালিকেরা বাধ্য। এ দেশে অন্য যেকোনো বিষয়ে আপোস করা হলেও খাদ্যমান নিয়ে কোনো প্রকার আপোস চলে না।

দেশটিতে সচরাচর ইফতার সামগ্রীর মধ্যে খেজুর, খোরমা, সালাদ, পনির, রুটি, ডিম, মাংস, ইয়াগার্ট, হট বিনস, স্যুপ, চা ইত্যাদি থাকে। আর তারা সাহরি সেরে থাকেন স্যুপ, পুডিং, রুটি, বার্গার ও পিৎজা ইত্যাদি দিয়ে। তবে এশিয়ান ও আফ্রিকান মুসলিমরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতেই পছন্দ করেন বেশি।

এ দিকে নিউইয়র্কের মুসলিম মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলো স্পেশাল ইফতারি সরবরাহ করে থাকে। যাতে প্রচলিত আইটেমের পাশাপাশি থাকে নতুন নতুন মুখরোচক খাবার। সন্ধ্যায় বেশ আগে থেকে রেস্টুরেন্টগুলোতে ইফতার কেনার ভিড় লেগে যায়। অনেক রেস্টুরেন্ট এ উপলক্ষে বাড়তি লোক নিয়োগ দেয়।

পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিলে জমজমাট থাকে মুসলিম কমিউনিটি। এসব ইফতার মাহফিলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ধর্মীয় আলোচনা, দেশের সমৃদ্ধি ও মুসলিম বিশ্বের শান্তি কামনা করে মোনাজাতের পর উপস্থিত রোজাদারদের মাঝে পরিবেশন করা হয় ইফতার সামগ্রী। শুধু নিউইয়র্ক ইসলামিক সেন্টারেই প্রতিদিন দুই হাজারের অধিক রোজাদারের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়।

কোরআন নাজিলের মাস রমজানে বেড়ে যায় আমেরিকান মুসলমানদের কদর। সেই সুবাদেই ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রমজান মাসে হোয়াইট হাউসে ৫৩টি দেশের মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে আমন্ত্রণ করে ইফতার পার্টি আয়োজন করেন। এ ধারা প্রতিবছরই চালু রয়েছে। এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর অনুগ্রহে ক্রমশই আমেরিকানরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে বর্তমানে মুসলমানদের অবস্থান আমেরিকাতে তৃতীয়।

যে দেশে আগামী দশকগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যা দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে, সে দেশের মুসলমানরা রমজান মাসে আলোর হাতছানি দেখতে পাবে- এটাই তো স্বাভাবিক। কেননা মুসলিম জনসংখ্যা ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ৬ দশমিক ২ মিলিয়নে পরিণত হবে বলে পিউ রিসার্চের জরিপ পূর্বাভাস দিয়েছে। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৮ ভাগ থেকে তারা তখন ১ দশমিক ৭৭ ভাগে উন্নীত হবেন বলে পিউ ব্যাখ্যা দেয়।

আরেক জরিপ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন অব স্ট্যাটিস্টিশিয়ান্স অব আমেরিকান রিলিজিয়াস বডিস’ এর জরিপ মতে, ২০০০ সালে যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা যেখানে ১০ লাখ ছিল, ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ লাখে। আর এখন তা পঞ্চাশ লাখের ওপরে। এ সব কীসের ইংগিত বহন করে? এ-ই তো শুভ্র সফেদ ভোরের আগমনী বার্তা!

২০০০ সালে যেখানে আমেরিকার মসজিদের সংখ্যা ছিল ১২০০, বর্তমানে সেখানে মসজিদের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। খোদ টুইন টাওয়ার, বর্তমানে যেটা ফ্রিডম টাওয়ার নামে নতুন করে নির্মিত, তার পাশেই গড়ে ওঠেছে আল্লাহর ঘর, চমৎকার একটি মসজিদ। এমন কোনো দিন নেই যেদিন নিউইয়র্কের কোনো না কোনো মসজিদে কোনো না কোনো মাহফিল হচ্ছে না। আর দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের কথা বলতে লাগলে তো আরেক উপাখ্যান রচিত হয়ে যাবে।

বর্তমানে আমেরিকায় ২.৬ মিলিয়ন মুসলমান শুক্রবার মসজিদে যান। ৪০ ভাগ আমেরিকান মুসলমান নিয়মিত মসজিদে যান। শুধু পুরুষই নয় নারীরাও মসজিদে যান। প্রতিটি মসজিদেই নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। আমেরিকার মসজিদগুলোর ইমামরা ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। যেকোনো ধর্মীয় সমস্যার সমাধান দিতে তারা সক্ষম। ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে এখানকার মুসলমানরা দিন দিন মসজিদমুখি হচ্ছেন। বর্তমানে আমেরিকায় ইসলাম সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন ধর্ম। এছাড়া মুসলমানরাও আস্তে আস্তে নিজেদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন। ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা নিরসনের চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তরুণরা ইন্টারনেটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। আর রমজান মাসকে তারা উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেন।