বিশ্বের বৃহত্তম এলসিডি প্যানেল নির্মাতা এলজি ডিসপ্লে কোম্পানির ভবিষ্যত্ পাজুর একটি উত্পাদন লাইনের ওপর নির্ভর করছে। ছোট এ শহরটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে ২০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। সেখানে জৈব ডয়োডের মতো অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহত্তম প্যানেল তৈরির জন্য একটি উত্পাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে এলজি। পাজুর ওএলইডি কারখানায় আরো ৮৯০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করা হবে বলে ২০১৫ সালের শেষের দিকে এক ঘোষণায় এলজি ইলেকট্রনিকস জানিয়েছিল। সমস্যা এখন একটাই— কারখানার অবস্থান। কারখানাটি দুই কোরিয়াকে বিভক্তকারী বেসামরিক এলাকা থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। যার কারণে পাজুর ৪ লাখ ৪২ হাজার অধিবাসী ও এলজির অত্যন্ত ব্যয়বহুল কারখানাটিকে উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উনের গোলন্দাজদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। পাজুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলের প্রধান হান সাং-হি বলেন, উত্তর কোরিয়া আক্রমণ চালাতে পারে, গণমাধ্যমগুলোর বেশি বেশি এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ফলে আমরা মানসিকভাবে প্রভাবিত হচ্ছি।

chardike-ad

দুই কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে এমনই দ্বৈত পরিস্থিতিতে ফেলেছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিদ্যমান সংকট দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিকেই পিয়ংইয়ংয়ের সম্ভাব্য আক্রমণের মুখে অসহায় করে তুলেছে। সীমান্ত থেকে ২৫ মাইল দূরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি বিশিষ্ট ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্যামসাং বায়োলজিকস কোম্পানি ও সেলট্রিয়ন করপোরেশন রয়েছে। বিশ্বখ্যাত কিয়া মোটরস করপোরেশনের একটি কারখানাও সীমান্ত থেকে একই দূরত্বে অবস্থান করছে, যেখানে অন্তত ৫ হাজার ২০০ কর্মী রয়েছেন, যা গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটির মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১৫ শতাংশ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিয়ংইয়ং যেসব স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার রকেটের পরীক্ষা চালিয়েছে, এক কোটি জনসংখ্যা নিয়ে সিউলের পাশাপাশি এসব বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলোর সেগুলোর সহজ লক্ষ্যে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর কোরিয়া যদি আক্রমণ শুরু করে তবে এর সর্বনাশা প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন ব্লাক্সল্যান্ড। এর প্রভাব উত্তর কোরিয়াকে ছাপিয়ে সারা বিশ্বের ওপর পড়বে। এর অন্যতম কারণ দেশটি থেকে গ্রাহকদের কাছে জাহাজ ও স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ডিসপ্লে ও সেমিকন্ডাক্টরসের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়।

বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মেমরি সেমিকন্ডাক্টরস প্রস্তুত করে থাকে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো। অ্যাপলের ১২ শতাংশ যন্ত্রাংশ দেশটি থেকে সরবরাহ করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র কোরিয়াকে আঘাত করে তবে সব ইলেকট্রনিকস উত্পাদন বন্ধ হয়ে যাবে। সূত্র: ব্লুমবার্গ