Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দিল্লিতে মসজিদ ভাঙচুর, আতঙ্কে মুসলমানরা

indiaভারতের দিল্লির উত্তর-পূর্বে অম্বে বিহার নামের এলাকায় গত সপ্তাহে একটি সদ্যনির্মিত মসজিদ ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে আতঙ্কে ভুগছেন ওই এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত বুধবার আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ লোক বাইরের এলাকা থেকে এসে ওই মসজিদটি ভেঙে দেয়।

মসজিদটি ভাঙার ঘটনাটি দেখেছেন মুশতার আহমেদ, তিনি ওই মসজিদের দুটো বাড়ি পরেই থাকেন। তিনি জানান, রমজান মাসের শুরু থেকে ওখানে নামাজ পড়া শুরু হলেও সেদিন কিছু লোক এসে মসজিদটি ভেঙে দিয়ে যায়।

chardike-ad

তৈরি পোশাক শিল্পে ছোটখাটো কাজ করেন মুশতার। অনেক কিছু বলতে চাইছিলেন তিনি, তবে হুমকি আসছে নিয়মিত, তাই পরিবার নিয়ে ভয়ে আছেন।

বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় মুশতার আহমেদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্ত্রী আমিনা। তিনি বলেন, মসজিদটি ভেঙে দেয়ার থেকেও তার বেশি খারাপ লাগছে কোরআনের অসম্মান করাটা।

জানা যায়, বেশ কয়েকজন মুসলমান পরিবার অম্বে কলোনি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শাহরুখ (প্রতীকী নাম) নামে এক ব্যক্তিকে তার চুল কাটার সেলুন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাড়ির মালিক নাকি শাহরুখকে বলেছেন, দোকান ছেড়ে চলে যেতে। এখন শাহরুখ নিজের ঘরেই আবারও সেলুন চালুর কথা ভাবছেন।

পূর্ব দিল্লিতে যমুনার পাড় বরাবর বস্তিগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষেরই বসবাস। সকাল হলে সবাই কাজে বেরিয়ে যান। গত বুধবারও সবাই কাজে চলে যাওয়ার পরই ঘটনার শুরু।

মসজিদ যারা ভাঙতে এসেছিল, তাদেরকে দেখেছিলেন বিমলেশ মৌর্য। তিনি বলেন, ‘৪০০-৫০০ লোক জড়ো হয়েছিল। ওই লোকগুলো কোথা থেকে এসেছিল বলতে পারব না। তবে ওরাই মসজিদটি ভেঙেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুসলমান ভাইরা কোরআনের শপথ নিয়ে, ভেঙে দেয়া মসজিদের ওপরই চাটাই বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন।’

মুশতাক আহমেদ ও কলোনির অন্য মুসলমান বাসিন্দারা বলেন, কয়েক মাস আগেই মসজিদটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল, তবে নামাজ পড়া শুরু হয় রমজান মাস থেকে। একটি ছোট মাদ্রাসাও চালানো হয় সেখানে, যাতে বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া যায়।

কৃষ্ণপাল শর্মা কয়েকদিন আগেই বাগপত থেকে ছেলের কাছে থাকতে এসেছিলেন। তিনি স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জেনেছেন, ‘ওই জমিটা কোনো সাধুবাবার ছিল। একটি শিবলিঙ্গও নাকি ছিল সেখানে। তবে ওই সাধু হরিদ্বারে গেছেন আর সে সময়ই নামাজ পড়া শুরু হয়।’

তবে সাব্বির নামে একজন বলেন, ‘যদি আমাদের হিন্দু ভাইদের আপত্তি থাকতো, তাহলে তো তারা সেটা আগেই বলতে পারতেন। ভেঙে দেয়া হলো কেন?’

বিমলেশ মৌর্য অবশ্য স্পষ্টই বলেন, এলাকার লোকজন চাইছিল না যে ওখানে মসজিদ হোক।

আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে এমন মেসেজও ছড়ানো হচ্ছে যে অম্বে কলোনির ওই জায়গায় ৮-১০ ঘর মুসলমান থাকে, তাই সেখানে কেন মসজিদ বানানো হবে। এসব মেসেজের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, ‘ইসলামিকরণের প্রক্রিয়া’ যেন সবাই মিলে বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়।

উত্তরপূর্ব দিল্লির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র আর্য বলেন, ‘পাহারা দেয়া ছাড়াও বিকেলের দিকে ইফতারের সময়টায় প্রত্যেক রাস্তা আর গলিতে টহল দিচ্ছে পুলিশ বাহিনী।’

জমির মালিক আকবর আলীর অভিযোগ অনুযায়ী, আট জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্যদিকে, মসজিদের পাশেও বসেছে পুলিশি পাহারা। সূত্র: বিবিসি