Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৩০০ নারীর জীবন বদলে দিলেন পুলিশ সুপার

Barguna-Jagoroniবিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে তিন শতাধিক নির্যাতিত নারীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে গঠিত ‘জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র’।

বলতে গেলে বরগুনার অতি দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারীদের আস্থার প্রতীক এখন ‘জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র’। সেই সঙ্গে তিন শতাধিক নারীর জীবন বদলে দিলেন জেলা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক।

chardike-ad

নারী অধিকার নিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে বরগুনায় কর্মরত একটি উন্নয়ন সংগঠনের প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা, অসেচতনতা এবং দারিদ্র্যের কারণে ভুক্তভোগী অসহায় নারীরা সঠিকভাবে আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে না। পারেন না নিজেদের নির্যাতন বা ভোগান্তির কথা খুলে বলতে।

ফলে একদিকে বিচারকার্য যেমন বিলম্ব হয় তেমনি ভোগান্তি বাড়ে নারীদের। আর একবার নারীরা যখন তাদের স্বামী বা শ্বশুরের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নেন তখন আর ওই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা ওই নারীকে সাধারণত মেনে নিতে চান না। ফলে রুদ্ধ হয়ে আসে সমঝোতার পথও।

এসব বিবেচনায়, অসহায় দরিদ্র নারীদের পাশে থেকে আইনি পরামর্শের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে নারী নির্যাতনের হার কমিয়ে আনতে বরগুনা জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্থাপন করা হয় জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অধীনে এ সহায়তা কেন্দ্রের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী উপ-পরিদর্শক (এসআই)। রয়েছে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি অভিযোগ গ্রহণ কমিটি।

এছাড়া সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্থানীয় সমাজসেবক, উন্নয়নকর্মী, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও নারীনেত্রীসহ ২৫ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক দলও রয়েছে জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের।

২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা পুলিশের এ জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. হাছানুজ্জামান এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জুলফিকার আলী খান।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি নাজমা বেগম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যতিক্রমী এ নারী সহায়তা কেন্দ্র নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের পাশাপাশি নারীর নিরাপত্তায় নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। বরগুনা জেলা পুলিশের মতো সারাদেশের জেলা পুলিশ এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে হ্রাস পাবে নারী নির্যাতন। এগিয়ে যাবে দেশ।

জেলা পুলিশের জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের সমন্বয়কারী এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, প্রথম দিকে তিনি একাই জাগরণীর সব কাজ সমন্বয় করতেন। অধিকাংশ অভিযোগের কার্যকরী সমাধানের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এখন এত বেশি অভিযোগ জমা পড়ছে, তা সামলাতে এখন অতিরিক্ত আরও দুজন সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং একজন কনস্টেবল নিযুক্ত করা হয়েছে।

এসআই জান্নাত আরও জানান, ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর থেকে এ অবধি মাত্র আট মাসের মধ্যে জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে তারা ২১৩টি পারিবারিক নির্যাতন, আটটি যৌতুক, ১৯টি ইভটিজিং, ১৬টি বাল্যবিবাহসহ তিন শতাধিক অভিযোগের কার্যকরী সমাধান করেছেন। পাশাপাশি সাতটি অভিযোগকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। নয়টি অভিযোগ লিগ্যাল এইডে পাঠানো হয়েছে এবং এখনও ২১টি অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন।

পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, সবার আগে সমাজের অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মুখোমুখি হতে হয় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেই। তাই মামলা পরিচালনার সামর্থ্য নেই অথবা মামলায় আগ্রহী নয় এমন দরিদ্র, অসহায় ও নির্যাতিত নারীদের ভোগান্তি লাঘবে পুলিশিং সেবার মধ্য দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ সহায়তা কেন্দ্র গঠন করা হয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর অসহিষ্ণু আচরণ এবং ছোটখাটো দাম্পত্য সমস্যা, পারিবারিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানবিক সমস্যা, ইভটিজিং ও বখাটেদের উৎপাত, স্ত্রী-সন্তান কিংবা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজখবর না রাখা, ভরণ-পোষণ না দেয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করছে জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র।

পুলিশ সুপার বিজয় বসাক আরও বলেন, যেসব ঘটনা আপসযোগ্য শুধু সেসব বিষয় নিয়েই কাজ করছে জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র। আপসযোগ্য নয় এমন কোনো ঘটনার ভুক্তভোগীদের নিয়মিত মামলা করার ক্ষেত্রে সব রকমের সহযোগিতা ও আইনি পরামর্শ দিয়ে আসছে এ সংগঠন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৪ জুন পুলিশ সুপার হিসেবে বরগুনায় যোগ দেন বিজয় বসাক। যোগদানের পর থেকে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উদ্যোগে নানামুখী সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলেন তিনি।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীও মূল্যায়ন করেছেন বিজয় বসাকের সৃজনশীলতাকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং ২০১২ সালে তিনি অর্জন করেন আইজি ব্যাচ।

এছাড়া বরগুনায় যোগদানের পর থেকে এ অবধি একাধিকবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।