Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শাহজালালে এক ভিন্নধর্মী প্রতারক আটকের মজার গল্প

shajalal-international-airportপুলিশ অফিসার প্রতারক ধরছেন…

– স্যার, ছাইড়া দেন, ব্যবস্থা করে দেবো।
– কি ব্যবস্থা করবি?
– এক লাখ?
– ধুরোও, তুইতো দেহি ফইন্নি প্রতারক।
– আপনিই বলেন স্যার, কত দিমু?
– পাঁচ লাখ
– আচ্ছা দুই লাখ দিমু স্যার
– ছয় লাখ
– কি ক’ন স্যার! এই না বললেন পাঁচ লাখ?
– সাত লাখ
– ঠিকাছে ঠিকাছে আগেরটাই সই, পাঁচ লাখ দিমু স্যার

chardike-ad

প্রতারক মফিজ তার বউকে ফোন করে দ্রুত পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেন। এসব কাণ্ড দেখে প্রতারণার শিকার উপস্থিত দু’জন ভিকটিম মন খারাপ করে চোখ কপালে তুলে বসে থাকেন! বউ টাকা নিয়া আসার ফাঁকে আসুন মফিজ মিঞার গল্প শুনি।

দেখতে শুনতে টালিউড-ঢালিউড ফেইল। অফিসিয়াল কালো ব্যাগ বগলে নিয়ে এয়ারপোর্টের সামনে ভিজিটর বেশে ঘুরে বেড়ায় মফিজ। বিদেশ থেকে আগত গ্রামের নিরীহ যাত্রিরা তার টার্গেট। যাত্রি পার্কিং এরিয়ায় আসলে পিছু নেয়। একসময় পাশে হাঁটতে হাঁটতে খুব স্মার্টলি উপদেশ ছোঁড়েন, ‘এই যে ভাই/আপা, বিদেশী টাকা থাকলে তাড়াতাড়ি কাগজে মুড়িয়ে নেন। এখানে কিন্তু সরকার সেন্সর মেশিন বসিয়ে রাখছে। মেশিনে ধরা পড়লে এত কষ্টের টাকা শেষ, রেখে দেবে।

যাত্রি ভড়কে যায়। তখনই তিনি পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে যাত্রির সহযোগিতায় এগিয়ে দেন। যাত্রি যখন বিদেশী টাকা কাগজে মোড়াতে থাকেন, তিনি মোড়ানো হচ্ছে না জানিয়ে বলেন, ‘এদিকে দেন আমি মুড়িয়ে দেই। ‘এই বলে যাত্রির কাছ থেকে কাগজ মোড়ানো টাকা নিয়ে যথাযথভাবে মুড়িয়ে আবার যাত্রির হাতে দেন এবং শরীরের কোথায় রাখতে হবে তাও দেখিয়ে দেন। তারপর গাড়ি ভাড়া করে দিয়ে যাত্রিকে বিদায় দেন। যাত্রি বাসায় যেয়ে কাগজের মোড়া খুলে দেখেন ভেতরে বিদেশী টাকা সব সাদা কাগজের টুকরা বনে গেছে। দারুন ম্যাজিক না?

মফিজ মিঞার বউ এখনো ঘুষের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে পৌঁছে নাই। তবে কাছাকাছি চলে এসেছে মর্মে আপডেট জানিয়েছেন। আসুন, এই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ওনার ম্যাজিকটা রিভিল করার চেষ্টা করি।

যাত্রী যেই কাগজের মোড়াটা বাসায় নিয়ে গেছেন, সেটা পূর্ব থেকেই মফিজ মিয়া শার্টের নীচে বগলে চেপে রেখেছিলেন। যাত্রির হাত থেকে অরজিনালটা নিয়ে মোড়ামুড়ি করে মুহুর্তেই যাত্রিকে বলেন, ‘এই যে এইভাবে বোগলে লুকিয়ে রাখেন। ‘ অভিনয় করে দেখাতে গিয়ে তড়িৎগতিতে অরজিনাল মোড়াটা নিজ শার্টের ভেতর ছেড়ে দিয়ে বগলের নকলটা বের করে দিয়ে দেন।

এরকম বহু যাত্রির অভিযোগ শুনে পুলিশ অফিসার তাকে ধরার প্ল্যান করেন। পুলিশের একাধিক নারী সদস্যকে তিনি বোরখা পরিয়ে বিদেশ ফেরত যাত্রী সাজিয়ে ট্র্যাপ বসান। মাসাধিক কাল চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মাথায় রক্ত চেপে যায়। দু’জন ভিকটিমকে খবর দিয়ে নিয়ে এসে পার্কিং এলাকার সিসিফুটেজ নিয়ে বসেন। ঘন্টার পর ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করে ভিকটিমদ্বয় আজ মফিজকে সনাক্ত করেন।

ওহ সরি, এদিকে মফিজ মিয়ার বউ ঘুষের টাকা নিয়া পৌঁছে গেছেন। মফিজ মিয়ার হাতে টাকার বান্ডিল, মুখে আমতাআমতা হাসি। পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে…

– স্যার একটু সমস্যা হয়ে গেছে। বউ’র কাছে ৫ লাখ রাখছিলাম। এক লাখ মাইরা দিছে।
– তো?
– আমার আজকের ইনকাম (!) ২১ হাজার সহ এখানে মোট ৪ লাখ ২১ হাজার হইছে, মাইনা যান স্যার।
– (প্রথম ভিকটিমকে দেখিয়ে) ওনার কাছ থেকে কত নিছো, খেয়াল আছে?
– বাংলা টাকায় ৭০ হাজার হইছিলো স্যার।
– দেনা-পাওনা রাখতে নাই। গুণে নিজ হাতে বুঝিয়ে দাও।
– আপনারটা কমে যাবে না স্যার?
– (দ্বিতীয় ভিকটিমকে দেখিয়ে) ওনার কাছ থেকে কত নিছো?
– ২৩ হাজার হইছিলো স্যার।
– গুণে দিয়ে দাও
– আপনার জন্য বাকী আছে ৩ লাখ ২৮ হাজার। গুণে দেবো স্যার?

অতঃপর পুলিশ অফিসার প্রতারণা, যাত্রী হয়রানি ও ঘুষ অফারের দায়ে মফিজকে অবশিষ্ট ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকাসহ বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সোপর্দ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান তিনি। এয়ারপোর্ট এপিবিএন (Airport Armed Police Battalion) এর গোয়েন্দা শাখা দেখেন। প্রাউড অব ইউ ম্যান।

লিখেছেন: বানসুরি ইউসুফ, সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ