অতিরিক্ত চাপ নিতে গিয়ে হঠাৎ করেই দুদিন আগে বিকল হয়ে পড়ে তার মস্তিষ্ক। শরীরের ‘পাওয়ার হাউজে’ কমে যায় অক্সিজেনের প্রবাহ। জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। নেয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয় তাকে। এখন এই লড়াই চলছে সিঙ্গাপুরে।
বলা হচ্ছে খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থানপর্বের দর্শকরা জানেন তার লড়াইয়ের অবিশ্বাস্য গল্প। ক্রিকেটার হিসেবে তার সামর্থ্য ছিলো সামান্যই। সেই সীমিত সামর্থ্য দিয়েই বছরের পর বছর খেলে গেছেন ক্রিকেট। পাহাড়ের মতো মনোবল নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সমার্থ্যের সীমারেখা। ক্রিকেট মাঠের সেই ‘ফাইটার’ ইতিহাস হয়ে গেছেন অনেক আগেই। তারপরও সুজন ফের আলোচনায় অন্য লড়াইয়ের কারণে। যে লড়াইয়ে আপাতত সিঙ্গাপুরে তিনি।
পরশু রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চলছিলো সুজনের চিকিৎসা। সেখান থেক গতকাল নেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরের পার্কওয়ে ইস্ট হাসপাতালে। ইউনাইটেডের চিকিৎসকরা বলছেন শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।
তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কোনো রকম ঝুঁকি না নিতেই বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত। গতকাল রাতে যখন তাকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া হচ্ছে, হাসপাতালে তখন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের ভিড়।
আকরাম খান, খালেদ মাসুদ থেকে শুরু করে হালের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরা ছিলেন। ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলও। এ ছাড়া বিসিবির উচ্চপদের পরিচালকরাও ছিলেন।
সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়ার আগেও সুজনের মুখটা ছিলো ক্লান্ত। কোনো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। কেবল কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলে সাড়া দিচ্ছিলেন সামান্য। এ রকম ধকল যে জীবনেও পাননি, সেটাই যেনো ফুটে উঠছিলো তার চোখেমুখে।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর নায়ক বহুদিন গণমানুষের ভালোবাসা পাননি। নানা কারণে বরং সমালোচনার পর সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। তবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া এই ফাইটারের জন্য এখন প্রার্থনার হাত মেলে বসেছে পুরো দেশ। ঘৃণা বা সমালোচনা নয়, মাহমুদের জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখন একটা অনুভূতিই কেবল আছে— এবং সেটা অবশ্যই ভালোবাসা।