Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রতারণা অবজ্ঞা ও ভুতুরে বিলে কলকাতায় কমছে বাংলাদেশি রোগী

Kolkata-Hospitalভারতে বাংলাদেশী পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এই পর্যটকদের একটি বড় অংশই যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে। কিন্তু দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লেও কলকাতায় এ ধরনের পর্যটকের সংখ্যা কিছু দিন ধরে কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশী রোগীরা কলকাতার পরিবর্তে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লীসহ দক্ষিণের শহরগুলোতে ছুটছেন। এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে কলকাতার হাসপাতালগুলোকে, এতদিন যাদের আয়ের একটি বড় উৎস ছিল বাংলাদেশের রোগী। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

শুক্রবার প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোগীদের প্রতি অবহেলা আর ভুতুরে বিলের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় কলকাতার চিকিৎসা-পর্যটনে নেতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের রোগীরা কলকাতার হাসপাতালগুলোতে এড়িয়ে যেতে শুরু করেছেন। বস্তুত বাংলাদেশের মতো কলকাতার মোড়ে মোড়েও এখন প্রতারক দালালদের ফাঁদ পাতা আছে।

chardike-ad

এর আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়েছিল বাংলাদেশী রোগীদেরকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবাংলা তথা কলকাতার হাসপাতালগুলোর রমরমা ব্যবসার তথ্য। মূলত বাংলাদেশী রোগীদের উপর ভর করে কলকাতায় গড়ে উঠে ২০-২৫টি হাসপাতাল। এসব হাসপাতাল, কিছু আবাসিক হোটেল, দামী রেস্টুরেন্ট, মার্কেট ইত্যাদির প্রধান ক্রেতা-ভোক্তা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। তাইরোগী কমে যাওয়ার বিষয়টি শুধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নয়, সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যবসায়ীদেরকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, কলকাতায় হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দালালের সংখ্যা। তারা রোগীদেরকে ফুঁসলিয়ে, বিভ্রান্ত করে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যায়। কমিশনের লোভে সুহৃদ সেজে রোগীদের প্রতারিত করে।

অনেক হাসপাতালে সাধারণ মানের চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে রোগী দেখে। রোগীদের ভয় দেখিয়ে, বিভ্রান্ত করে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের দিকে ঠেলে দেয়। ধরিয়ে দেওয়া হয় মোটা অংকের বিল। একই হাসপাতালে একই রোগের চিকিৎসায় নেওয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন অংকের বিল।

এসব প্রতারণার গল্প দিন দিন ছড়িয়ে পড়তে থাকায় কলকাতার হাসপাতালগুলোর উপর থেকে আস্থা কমে যেতে থাকে বাংলাদেশী রোগীদের। কমতে থাকে রোগীর সংখ্যা। গত বছর হঠাৎ করে ৫শ ও ১হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিস্থিকে নাজুক করে তুলে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছরে কলকাতার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা বেড়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস থেকে তা কমছে। ঢাকুরিয়া, মুকুন্দপুর ও সল্টলেকে আমরি হাসপাতালের তিনটি শাখায় প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে যেতেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে এই সংখ্যা ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

কলকাতার আমরি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী (সিইও) রূপক বড়ুয়া বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতার হাসপাতালগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়েছে। এতে বাংলাদেশের রোগীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। তারা এখন কলকাতা ছেড়ে দিল্লি বা দক্ষিণের প্রদেশগুলোর দিকে যাচ্ছেন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কলকাতার রুবি জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ও ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি রোগী সংখ্যা তলানীতে নেমে এসেছে। এই হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ৪৫০ জন বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিতেন। অথচ গত জুনে ২০ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাসপাতালটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শুভাশীষ দত্ত বলেন, ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো সমালোচনার মুখে পড়ে। এ ছাড়া নোট বাতিলের ধাক্কা, ভিসানীতির কড়াকড়িও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। হাসপাতালে ভর্তির জন্য চিকিৎসা ভিসা বাধ্যতামূলক করায় বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমছে।

তিনি বলেন, কলকাতার হাসপাতালগুলোর ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশী রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দক্ষিণ কলকাতার দুটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি মাসে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসতেন। গত পাঁচ মাসে তা ৫ শতাংশ কমে এসেছে।

তবে এর মধ্যেও অ্যাপোলো গ্লেনিগেল ও আরএন ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসে (আরটিআইআইসিএস) বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।

এদিকে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও দিল্লীর বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে। এসব জায়গায় বাংলাদেশিরা কিছুটা ভাষাগত কারণে একটু অস্বস্তিতে পড়লেও স্থানীয় নাগরিকদের আন্তরিকতা ও তাদের সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে তেমন কোনো সমস্যায় পড়ছেন না। তাছাড়া কলকাতার মতো ঠগ-জোচ্চুরও নেই বললে চলে। তাছাড়া চিকিৎসা ব্যয়ও কিছুটা কম। বিশেষ করে বেঙ্গালুরুতে কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। সেখানে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। তাই হোটেল ভাড়া গুণতে হয় না। অন্যদিকে নিজেদের পছন্দের খাবার খাওয়া যায় কম খরচে। তাই বাংলাদেশি রোগীরা ওই অঞ্চলের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।