Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোনো দিনই আর ভাঙবে না সাগরের অভিমান

sagor-momমা শুঁটকি দিয়ে ভাত দিলেন। সাগর বলল মাছ খাবে। মা পাবেন কোথায়? সাগর অভিমান করল—খাবে না। না খেয়েই শুয়ে পড়ল। তারপর ভোরে সেই যে বের হলো, ফিরল লাশ হয়ে। মা কোনো দিনই আর সাগরকে মাছ খাওয়াতে পারবেন না। ভাঙাতে পারবেন না ছেলের কাঁচা অভিমান।

‘আমরা গরিব মানুষ। সংসারের অভাব আছে। কখনো কম খেয়ে, আবার কখনো না খেয়েও থাকি। তবু কোনো দিন আমরা কেউ চুরি করি না। আমার ছেলে চুরি করতে পারে না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন চুরি করার অপবাদে পিটিয়ে হত্যা করা কিশোর সাগরের মা হাসিনা খাতুন।

chardike-ad

বুধবার সকালে ময়মনসিংহ শহরের নাটকঘর লেন বস্তিতে সাগরের মা, ভাই ও বস্তির অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। হাসিনা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করে যারা মেরেছে, আমি তাদের চিনি না। আমি শুধু ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে কয়েক শ মিটার দূরে রেললাইনের দুই পাশে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ১৫-২০টি ঘর নিয়ে ছোট একটি বস্তি। তার একটা ঘরে প্রায় ২০ বছর ধরে সাগরের পরিবারের বাস। সাগর পরিত্যক্ত জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করত। সাগরের বাবা শিপন মিয়া প্রসাধনসামগ্রী ফেরি করেন। বড় ভাই আলমগীর ঢাকায় ফেরি করে খাবার বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে কোনো রকমে তাঁদের সংসার চলে। সংসারে সাগরের চার বছর বয়সী ছোট ভাই অনিক ও বড় বোন আছে।

হাসিনা খাতুন বলেন, গত রোববার রাতে সাগর খেতে বসলে তিনি শুঁটকির তরকারি দিয়ে ভাত দিয়েছিলেন। কিন্তু মাছ খাওয়ার বায়না ধরে। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে না খেয়েই শুয়ে পড়ে। ভোরে ভ্যান নিয়ে পরিত্যক্ত জিনিস কুড়ানোর জন্য বের হয়ে পড়ে। এরপর ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চর শ্রীমারপুর গ্রামে গাউছিয়া হ্যাচারিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যায় সে।

বাবা শিপন মিয়া থানা আর হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত। গতকাল মঙ্গলবার সারা রাত তিনি মর্গের সামনে ছিলেন। আজ সকালে ঘড়ির কাঁটায় যখন সাড়ে ১০টা, তখনো তিনি ফেরেননি।

ছেলের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মা ও বস্তির বাসিন্দারা চান লাশটি একবার বস্তিতে আনা হোক। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ আনতে খরচ হবে এক হাজার টাকা। সেই টাকা কোথায় পাবেন তাঁরা। জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন বস্তিবাসী। পরে লাশ বস্তিতে আনা হয়। বিকেলে জানাজা শেষে দাফন করা হয় শহরের ভাটিকাশর কবরস্থানে।

গত সোমবার ভোরে সাগরকে চর শ্রীরামপুর গ্রামে গাউছিয়া হ্যাচারিতে মাটির নিচ থেকে পানি তোলার মোটর চুরির অভিযোগে সাইনবোর্ডের সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এতে সে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর হ্যাচারির পেছনের অংশে একটি ঘরে লাশ লুকিয়ে রাখেন হ্যাচারির মালিক আক্কাস আলী ও তাঁর সহযোগীরা। পরে গত মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হ্যাচারির সামনের একটি কাশবনের ভেতর থেকে সাগরের লাশ উদ্ধার করে গৌরীপুর থানার পুলিশ।

এ ঘটনায় সাগরের বাবা বাদী হয়ে আক্কাস আলী ও তাঁর ভাই হাসু মিয়া, ছাত্তর, জুয়েল সোহেল ও হ্যাচারির শ্রমিক কাইয়ুমকে আসামি করে গৌরীপুর থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার রাতে রিয়াজ উদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। নির্যাতনের ভিডিওতে রিয়াজ উদ্দিনকে সাগরের চুলের মুঠি ধরে থাকতে দেখা গেছে। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মূল আসামি আক্কাস, কাইয়ুমসহ এজহারভুক্ত সব আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্থানীয় অনেকেই।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আজ সকালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে ডিবি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশের কোনো শিথিলতা নেই। প্রথম আলো