Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কেমন আছেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা খাদিজা?

khadijaকথা ছিল পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে মায়ের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাবেন। এ জন্য মা মনোয়ারা বেগমও অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর সন্ধ্যা। মেয়ে বাড়ি ফেরেনি। মায়ের অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা বাড়তে লাগল। খোঁজ নিতে শুরু করলেন পরিচিতজনদের কাছে। এরই মধ্যে খবর পেলেন, মেয়ে হাসপাতালে।

প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এক ছেলে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। এই শুনে মা তখন দিশেহারা। কখনো জ্ঞান হারাচ্ছেন, আবার জ্ঞান ফিরলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থণা করছেন, যেন মেয়ে বেঁচে ওঠে।

chardike-ad

২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর। সেদিন সিলেটের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম। পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর পথে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম।

রক্তাক্ত খাদিজাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় ও পরে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মৃত্যু মুখে চলে যাওয়া খাদিজা চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যান।

বিভীষিকাময় এই ঘটনার এক বছর পর কেমন আছেন খাদিজা বেগম?

জানা গেছে, এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠেননি তিনি। বাম হাত ও পা এখনো ঠিক হয়নি তার। মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে ওঠেননি। তার দিন পার হওয়ার কথা ছিল কলেজে, লাইব্রেরিতে বা পড়ার টেবিলে। অথচ এখন সারা দিন তিনি সময় পার করেন হাত আর পায়ের ব্যায়াম করে। তার এখন একটাই চেষ্টা, সুস্থ্য হয়ে ওঠা ও ভালভাবে বাঁচা।

খাদিজার বড় ভাই শাহরান হক শাহীন খদিজার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান, সে (খাদিজা) এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠেনি। বাম হাত ও পায়ে এখনো সমস্যা অনুভব করে। বলতে গেলে শরীরের বাম অংশে এখনো সমস্যা রয়ে গেছে। যদিও প্রতিদিন সে ব্যয়াম করছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসার ফলোআপের জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, ‘এখনো সে সুস্থ্য হয়ে উঠেনি। এ জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন নিজে নিজে ব্যয়াম করে আর ছোট ভাইকে পড়াচ্ছে। এভাবেই তার দিন পার হচ্ছে। তবে আশা করছি আগামী শিক্ষাবর্ষে তাকে আবার কলেজে পাঠাতে পারব।’

রক্ষণশীল যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠা খাদিজার পড়ালেখা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বন্ধ হয়ে যেত। তবে শাহীন চাইতেন তার বোন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। সহশিক্ষায় পরিবারের আপত্তি থাকায় খাদিজাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় সিলেট মহিলা কলেজে। শাহীন জানান, এখনো তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ আছে। তাই তাকে পড়ানোর চিন্তা আছে।

এর আগে স্কয়ার হাসপাতালে সঙ্গে আলাপকালে খাদিজা বেগমও জানিয়েছিলেন তিনি সুস্থ্য হয়ে আবারো কলেজে যেতে চান। পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকার হতে চান।

২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর যখন খাদিজাকে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়, তখন চিকিৎসকেরা বলেছিলেন তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তার গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) বা জ্ঞানের মাত্রা ছিল মাত্র ৬; যেখানে ১৫ থাকতে হয়। তার মাথার খুলির হাড় (স্কাল বোন) থেতলানো এবং গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এবং তা মিডলাইন থেকে সরে গিয়েছিল। এ অবস্থা থেকে খাদিজাকে বাঁচিয়ে তোলা চিকিৎসকদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকেরা। মুটামুটি সুস্থ হওয়ার পর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে সাভারে সিআরপিতে পাঠানো হয়েছিল।

খাদিজার উপর বদরুল হামলা চালানোর সময় আশপাশে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ এ দৃশ্য ভিডিও করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এ ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

ঘটনার সময় স্থানীয়রা বদরুলকে আটক করে গণধোলাই দেন। পরে শাহপরান থানায় সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে ওই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায়ই বদরুলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। বদরুল এখন কারাগারে আছেন। রাইজিংবিডি