Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় গিয়েও বিপাকে শ্রমিকেরা

Malaysia‘কলিং ভিসায়’ মালয়েশিয়া যাওয়ার পরও কোম্পানি থেকে বেতন পাচ্ছেন না সাতক্ষীরার যুবক ইসমাইল হোসেন। উল্টো বেতন, ওভারটাইম চাওয়ার অপরাধে কোম্পানির সুপারভাইজারেরা তাকেসহ কয়েক শ্রমিককে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে এক শ্রমিক জহুরবারুর কোম্পানি থেকে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে এমন অভিযোগ করেন জহুরবারুর ওই যুবক। তার অভিযোগ, তাদের কোম্পানির মতো বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় আসা আরো অনেক কোম্পানি ঠিকমতো বেতন, ওভারটাইম দিচ্ছে না। রয়েছে আবাসন সমস্যাও। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে অদ্যাবধি কোনো শ্রমিক কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধেই লিখিত অভিযোগ করেননি। যদিও প্রতারিত যুবক ইসমাইল তার কোম্পানির সমস্যা সমাধানে হাইকমিশনারের দরজা পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে যুবকটি হাইকমিশনারের কাছে অভিযোগ না দিয়ে হঠাৎ হাওয়া হয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

chardike-ad

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (শ্রম) সায়েদুল ইসলাম মুকুল এ প্রসঙ্গে জানান, নতুন কলিংয়ে এসে কোনো শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না, বেতন পাচ্ছেন না, এটা আমি মোটেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এর পরও আমি জহুরবারুর টিএলটি কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জানব ঘটনার পেছনে কী রয়েছে। যদি অভিযোগ সত্য হয় তাহলে ওই কোম্পানির একজন শ্রমিকের সমস্যার জন্য মালিককে ৩২ হাজার রিংগিত জরিমানা গুনতে হবে। চুক্তির সময় এমওইউতে এমনটাই উল্লেখ রয়েছে।

যুবকের অভিযোগÑ তিনিসহ মোট ২৬ জন শ্রমিক কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ার টিএলটি কোম্পানিতে এসেছিলেন আড়াই মাস আগে। এরপর কাজ শুরু করেন। আড়াই মাস কাজ করার পরও কোম্পানি তাদের এক দিনেরও বেতন দিচ্ছে না। কোম্পানি থেকে বেরও হতে দিচ্ছে না। বেতন না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সুপারভাইজারেরা জানান, সময় হলে বেতন পাবে তোমরা। এমন কথার প্রতিবাদ করলে তখন তাদের মারধর করা হয়। ইসমাইলের দাবিÑ বেতন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৬ শ্রমিকের মধ্যে একজন কোম্পানি থেকেই কয়েক দিন আগে পালিয়ে যান।

তিনি বলেন, জমিজমা বিক্রি আর ধারদেনা করে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে এ দেশে এসেছি। যদি বেতনই না পাই, তাহলে কেন কাজ করব? তার বক্তব্যÑ এ অবস্থা চলতে থাকলে অন্য শ্রমিকেরাও পালিয়ে যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঢাকার বনানীর একটি অফিস থেকে তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।

কুয়ালা লামপুর শিপাং এলাকার বাসিন্দা মিঠু এ প্রতিবেদককে জানান, মালয়েশিয়া সরকার হঠাৎ করেই কলিং ভিসা কমিয়ে দিয়েছে। কারণ কী তা জানতে পারিনি। তবে ইদানীং কলিংয়ে আসা শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই নানা সমস্যায় আছেন বলে শুনেছি। এর মধ্যে আবাসন সমস্যা বেশি।
২০১৭ সালের ১০ মার্চ মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রির মর্যাদা দিয়ে শ্রমিক আমদানি শুরু করে। এর পর থেকেই কলিং ভিসায় প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পৌঁছে কাজ শুরু করেন। বাকি চাহিদাপত্র যাচাই শেষে শিগগিরই আরো কয়েক হাজার শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমানোর অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার নেতারা জানান। জানা গেছে নতুন কলিং পদ্ধতিতে শ্রমিক যাওয়ার পর বেশির ভাগ শ্রমিকের থাকার সমস্যা হচ্ছে। কোনো কোনো কোম্পানি লেভির নামে শ্রমিকদের বেতন থেকেই টাকা কেটে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, আগে যে পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক আসত তখন কোনো সিস্টেম মানা হতো না। এখন আর আগের সেই দিন নেই। নতুন সিস্টেমে এ দেশে যেসব শ্রমিক আসছেন তাদের বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো শ্রমিক সমস্যায় আছেনÑ এমন লিখিত অভিযোগ যায় তাহলে ওই কোম্পানিরতো বারোটা বেজে যাবে! কারণ এ দেশের লেবার ল অনুযায়ী কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে একজন শ্রমিকের সমস্যার জন্য ৩২ হাজার রিংগিত জরিমানা গুনতে হবে। এরপর আরো শাস্তি তো আছেই।