Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

গ্রামবাসীর গর্ব যে মেয়ে

taniaময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম বেতাগৈর। এই গ্রামের এক মেয়ে ৩৬তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিচ্ছেন। এই সুখবরে গ্রামটিতে চলছে উৎসবের আমেজ। গ্রামের লোকজন গত শুক্রবার বিকেলে জহুরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তাঁর জন্য এক সংবর্ধনাসভার আয়োজন করে।

গ্রামের বাসিন্দা মো. তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে তানিয়া আক্তারকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি ওই বিদ্যালয় থেকেই এসএসসি পাস করেছিলেন।

chardike-ad

সংবর্ধনাসভায় তানিয়ার মা রাহিমা আক্তার জানান, তাঁর চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তানিয়া সবার ছোট। জন্মের পর থেকে সব কাজে তিনি ছিলেন এগিয়ে। বিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাঁর এই এগিয়ে থাকার ঘটনা প্রকাশ পায়। সব শ্রেণিতে তিনি ছিলেন প্রথম। কখনো দ্বিতীয় হননি। মায়ের স্বপ্ন ছিল, মেয়ে একদিন ম্যাজিস্ট্রেট হবে। সেই স্বপ্ন এবার সত্যি হচ্ছে। মা বলেন, ‘কলেজে পড়ার আগে ও পরে তানিয়ার বিয়ের প্রস্তাব আসে। সে সময় বিয়ে দিয়ে দিলে আজ এই সাফল্য গ্রামের লোকজন দেখতে পেত না। আজ তাকে কেন্দ্র করে গ্রামের সব কিছু আলোড়িত হচ্ছে। তাকে দেখতে চাইছে গ্রামের মানুষ। আমি স্বশিক্ষিত। কিন্তু মেয়ের এগিয়ে যাওয়াকে অধিক গুরুত্ব দিতাম।’

বাবা তোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ বিভাগে সহকারী হিসেবে চাকরি করতেন। ১৯৯৩ সালে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। একমাত্র ছেলেকে কুয়েত পাঠিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে পড়ালেখা করাতে না পারার আফসোস ছিল তাঁর। তাই চার মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু নানা কারণে তাঁর এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। গ্রামীণ সমাজের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করতে না পেরে এসএসসি পাস করার পর অনেকটা বাধ্য হয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দেন। কিন্তু মনের ভেতরের পরিকল্পনা বাদ দেননি। চাকরি ছেড়ে বাড়ি আসার সময় তানিয়া ছিলেন প্রাথমিকের ছাত্রী। সে সময় পাশের গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলী আফজল খান তাঁর মায়ের নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

১৯৯৫ সালে জহুরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। তানিয়া ছিলেন এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রী। নতুন বিদ্যালয় নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল। তানিয়া একবার ওই বিদ্যালয় ছেড়ে চলে এসেছিলেন। কিন্তু আলী আফজল খান অনেকটা জোর করে মেয়েকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। একপর্যায়ে সংবর্ধনাসভায় বক্তব্য দেওয়ার জন্য তোফাজ্জল হোসেনের ডাক পড়ে। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তানিয়া সব সময় নিজের মেধার ওপর ভরসা রেখেছে। প্রতিটি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। ময়মনসিংহের মমিনুনেচ্ছা সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তিনটিতেই চান্স পায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হয়ে প্রথম বিভাগে পাস করে। এরপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে চাকরি হয়। সে ব্যাংকের চাকরি করতে থাকে। এর মধ্যেই ৩৬তম বিসিএস ক্যাডারে প্রশাসনিক পর্যায়ে সুযোগ চলে আসে।’

সংবর্ধনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব রওনক জাহান। তিনি বলেন, ‘এখন অভিভাবকরা সহায়সম্বল বিক্রি করে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শহরে গিয়ে কোচিংনির্ভর হয়ে নামিদামি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য এলেও অনেকে খালি হাতে ব্যর্থ হয়ে আবার গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু তানিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে ভিন্ন।’ সংবর্ধনাসভায় উপস্থিত ছিলেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মার্জিয়া রেবেকা সুলতানা প্রমুখ। কালের কণ্ঠ