Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

একজন ‘সুপারহিরো’ শিক্ষক

সেনাবাহিনীর পোশাক গায়ে এক অফিসার চেয়ারে বসে আছেন। স্কুল ড্রেস পরা একদল ক্ষুদে শিক্ষার্থী তার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। অফিসার তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ দৃশ্য যে কাউকে মর্মাহত করবে। তবে চোখের জল আটকাতে কষ্ট হবে যখন শুনবেন এই অফিসার তাদের সদ্য সাবেক শিক্ষক। আর শিক্ষার্থীরা কাঁদছে কারণ তারা তাকে যেতে দিতে চায় না।

chardike-ad

লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ নাজমুর রহমান। রংপুরের দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ। শনিবার ফেসবুকে তিনি পোস্ট করেছেন শিক্ষার্থীদের কান্নার ছবি ও ভিডিও। ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোতে নিয়মিতই অধ্যক্ষ পরিবর্তন হয়। আসেন নতুন কোন কর্মকর্তা। তবে নাজমুর রহমান শিক্ষার্থীদের চোখে একজন ‘সুপারহিরো’। তারা তাকে ছাড়তে চান না কোনমতেই।

নাজমুর রহমান লিখেছেন, ‘আমার অফিসে এসে শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে বলে গেল- আপনি চলে গেলে আমরা স্কুলে আসব না। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম, স্কুলে না আসলে তোমরা বড় হতে পারবে না। সাথে সাথে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বললো- আমরা বড় হব না। আমাদের বড় হওয়া লাগবে না…।’

‘কি করুন সেই দৃশ্য! আমি অসহায়ের মতো জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, হে প্রভু, তুমি ভালবাসাকে কেন এত তীব্র করে সৃষ্টি করেছ?

আজ বিদায়ের ঘণ্টা শুনে আমার শিশুগুলো যখন কাঁদছে, আমি দৃঢ় কণ্ঠে ওদের বোঝানোর চেষ্টা করছি পুরানোর প্রস্থান আর নতুনের আগমনই জগতের নিয়ম। এটাই মানতে হবে। কিন্তু আমার হৃদয়…? সেখানে এক প্রলয়ংকরী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের উপরের পৃষ্টে শান্ত স্রোতের আড়ালে গভীরে সৃষ্ট ভুমিকম্প বা সুনামি অনেক পর্যটকের কাছে দৃশ্যমাণ হয়ত হয় না। কিন্তু আমি কি আমার নিজের কাছে সেই সত্য কে আড়াল করতে পারি? হয়তো একেই বলে সর্বনাশা ভালবাসা!’

সৈয়দ নাজমুর রহমানের আবেগের এই কথাগুলোর প্রতিফলন পাওয়া গেল তার ফেসবুক ওয়াল ঘুরে। বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়াও তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিভাবকরাও।

জুঁই রাজিয়া নামে এক অভিভাবক লিখেছেন, ‘…ভালবাসা আর শ্রদ্ধার মানুষকে বিদায় দিতে হয়। স্যারকে হারানোর ব্যথায় তারা (শিক্ষার্থীরা) এতটা ব্যথিত- বাবা মা হয়ে আমরাও সে ব্যথায় শামিল হয়েছি। আমরা যারা শিক্ষার সাথে জড়িয়ে আছি স্যারের কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। স্যারের মতো মানুষকে যদি বিদঘুটে অন্ধকারেও পাঠিয়ে দেয়া হয়, নিশ্চিত সেখানে তিনি আলো জ্বালাবেন’…।

রংপুরের সিতো-রিউ কারাতে স্কুল স্কুলের শিক্ষক এবি ব্যাবেল লিখেছেন, ‘স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় রংপুরে স্কুল পর্যায়ে প্রথম কারাতে প্রশিক্ষণ শুরু হয়, ধীরে ধীরে অন্যান্য স্কুলে এর প্রসার ঘটে এবং ওনার মাধ্যমে স্কুলে একটি কারাতে প্রতিযোগিতাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়। আমাদের জিমনেসিয়ামে কারাতের একটি বড় প্রোগ্রামেও উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে অলংকৃত করেছেন। রংপুরে স্কুল পর্যায়ে কারাতের অগ্রসরতার ক্ষেত্রে স্যারের ভূমিকা অনন্য। স্যারের এ অবদানের কথা রংপুরবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরের এই কর্মকর্তা হবিগঞ্জের সন্তান। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।  সম্প্রতি তার চট্টগ্রামে বদলি হয়েছে।