সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত দলের পাঁচজন শপথ নিলেও বাকি রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিজের শপথ প্রসঙ্গে কৌতূহল রেখে বলেছেন, ‘সময় হলেই দেখতে পাবেন।’
ফখরুলের শপথ না নেয়ায় বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা কথা উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির মধ্যম সারির একজন নেতা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তাই প্রতিবাদস্বরূপ তিনি শপথ নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন।’
এই নেতা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রতি বিএনপি নেতাদের এমন শ্রদ্ধা-ভক্তি নতুন নয়। আপনারা দেখেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের যখন মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়, তখন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন নাই। কারণ হিসেবে গণমাধ্যমে এসেছে যে, তারা খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবেন না। শপথ না নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সে রকম একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।’
দলের আরেকটি সূত্র জানায়, যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের শপথ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ এতটাই প্রবল ছিল যে যদি দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত তা তারা মানতে পারতেন না। ফলে দলকে আরও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো। সূত্র মতে, শপথের বিষয়ে যাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে তারা দলের হয়ে সংসদে আর মহাসচিব বাইরে থেকে কথা বলবেন।
গুঞ্জন উঠেছে, ৯০ দিনের শপথ গ্রহণ প্রসঙ্গে উপযুক্ত কারণ জানিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন ফখরুল। তাতে বিএনপি মহাসচিব অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেবেন।
তবে স্পিকারকে ফখরুলের চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি একই উত্তর দেন। বলেন, ‘সময় হলে দেখতে পাবেন।’
তবে ফখরুলের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের দাবি, ব্যক্তিগত কারণে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না। আর স্পিকারকে কোনো প্রকার চিঠিও ফখরুলের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। চিঠি দেয়া হলে তার কপি এতক্ষণে গণমাধ্যমে চলে আসত।
গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফখরুল বাদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরও চার সংসদ সদস্য শপথগ্রহণ করেন। শপথ নেয়া চারজন হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া এবং বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন।
সোমবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথ বাক্যপাঠ করান। এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন তারা।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথগ্রহণ করেন। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ও মিত্ররা। মাত্র ৮টি আসন পায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচিত আটজনের মধ্যে ছয়জন বিএনপির আর দু’জন গণফোরামের। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে ঐক্যফ্রন্ট।
গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে বিএনপির প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গত ৭ মার্চ শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরামের প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত মোকাব্বির খানও গত ২ এপ্রিল শপথ নেন।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন জাহিদুর রহমান। এ কারণে শনিবার রাতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বহিষ্কারাদেশের মাধ্যমে সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে দলটি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। বিএনপির বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে এখন শপথ নিতে বাকি রয়েছেন একমাত্র দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।