Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ায় ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশিরা

malaysia-bangladeshiমানবাধিকার কর্মী হারুন আল-রশিদ বলেছেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের আটক করে ক্যাম্পে নেয়ার পরও দুর্দশার শেষ হচ্ছে তা মোটেই নয়। ১৪ দিনের মধ্যে আদালতে পেশ করা হলে তাদের যে সাজা হয়, প্রথমে সেই মেয়াদটা জেলে কাটাতে হয়। তারপর যদি তারা দেশে ফেরার টাকা জোগাড় করতে পারেন, তাহলে নিজেকে বিমানের টিকিট কেটে ফেরার ব্যবস্থা করতে হয়।’

তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক এমন ঘটনা পেয়েছি, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা না-বুঝে ওই ভুয়া এজেন্টদের হাতে চার থেকে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত তুলে দিয়েছেন, তাদের আঙ্গুলের ছাপও নেয়া হয়েছে- কিন্তু এজেন্টরা ওই টাকা মেরে দেয়ায় তাদের আর কখনওই বৈধ হয়ে ওঠা হয়নি।’

মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘যেসব ভুয়া কোম্পানি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগেরই মালয়েশিয়ান ও মালয়েশিয়ান নাগরিকদের ছত্রছায়ায় মালিকানাও ছিল বাংলাদেশিদের।’

মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে শতশত অভিবাসীকে আটক করছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ায় থাকার পরও যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, এই ধরপাকড় অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করছে। গত ২ মাসে বাংলাদেশিসহ ১০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহরে ইমিগ্রেশন, পুলিশ, রেলা, সিটি কর্পোরেশনের যৌথ অভিযানের কারণে অবৈধ অভিবাসীরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ছোট ছোট শহর ও গ্রাম অঞ্চলের লোকালয়ে কাজ করছে এমন সংবাদ আগেই চলে যায় সংশ্লিষ্টদের কাছে।

আর এই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ। অভিবাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ মে পর্যন্ত, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ১২০টি অভিযানে আটক করা হয় ৩৩ হাজার ৮৯৫ জনকে।

malaysia-arestআটকদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৮ হাজার ৫৫২ জন অবৈধ অভিবাসীকে। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসী রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০০ মালিককে। তবে অভিযানে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কতজন করে গ্রেফতার করা হয়েছে তা অভিবাসন বিভাগ প্রকাশ করেনি। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান দাতুক ইন্দিরা খায়রুল দাজামী বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছেন।

আটকদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, নেপাল, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিকরাও রয়েছেন।

২০১৬ র ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সরকার রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু যে তিনটি ভেন্ডর কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়, তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বেশকিছু নকল এজেন্ট বা দালাল বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিরাট প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মালয়েশিয়াতে শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা পেনাংয়ে কর্মরত জুয়েল নামে এক বাংলাদেশি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের এজেন্ট তার কাছ থেকে চার হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি ৮০ হাজার টাকা) নিয়ে বিনিময়ে শুধু একটি মাই-ইজির কাগজ (ভেন্ডর সংস্থা) ধরিয়ে দেয়।

‘দীর্ঘদিন ঘুরেও আমার ভিসা না হওয়ার কারণে আমাকে এখন দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই এজেন্ট বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করছে’ বলেন জুয়েল।

মালয়েশিয়ার স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া বলেন, ‘যখনই একটা এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে, প্রথমেই বৈধ ও অবৈধ- সব বিদেশি শ্রমিককে ধরে এনে খোলা জায়গায় সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোদ হোক বৃষ্টি-তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

বাংলাদেশিদের অপরাধের কারণে শ্রমবাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী এই প্রতিবেদককে জানান, মালয়েশিয়া সরকার সবসময় স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ দিলেও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা প্রতারিত হয়ে আসার কারণেই দীর্ঘদিন বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। সেই প্রতারণার ঘটনা মুছতে না মুছতেই কিছু কিছু বাংলাদেশিদের ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরাধের কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন ধারণা অনেকের।

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email