Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট জালিয়াতি : চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন মিজান

malaysia-mizanমালয়েশিয়ায় জাল পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরির মূলহোতা কুমিল্লার মিজানকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে নানা অজানা কাহিনি। ১৬ মে ইমিগ্রেশনের ফাঁদে আটকা পড়ে মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি মিজানসহ বিভিন্ন দেশের ১৭ জন। মিজান পাসপোর্ট ও ভিসা জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন বলে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ ও পুলিশের যৌথ অভিযানে জাল পাসপোর্ট, ভিসা স্টিকারসহ ১৬ জনকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এ সময় উদ্ধার করা হয় ১৭০টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ইন্ডিয়ার ১০টি পাসপোর্টসহ ১০ জাল ভিসা স্টিকার।

chardike-ad

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বল্পশিক্ষিত মিজান পরিবারের অভাব ঘোচাতে ১৫ বছর আগে মালয়েশিয়ায় আসে শ্রমিক ভিসায়। মিজান মালয়েশিয়ার ভাষা রপ্ত করে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে। বাড়তি আয়ের আশায় জাল পাসপোর্ট, ভিসাসহ গ্রেফতার হয়। সেই সময় দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে ব্ল্যাকলিস্ট করে দেশে পাঠিয়ে দেয়।

মালয়েশীয় নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে ব্ল্যাকলিস্ট কাটিয়ে স্ত্রীর মাধ্যমে আবার মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে। এরপর মিজান স্ত্রীর নামে কোম্পানির লাইসেন্স করে।

অবৈধ বাংলাদেশিদের ভিসা করে দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নেয় ৪০ লাখ টাকা। আর সেই টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তারই কোম্পানিতে কর্মরত আরেক বাংলাদেশিকে ফাঁসাতে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সোলাইমান নামক এক বাংলাদেশি টাকা নিয়ে লাপাত্তা। তার কোম্পানিতে ভিসা করতে দেয়া বাংলাদেশিরা নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করছিল কখন আবার সোলাইমান মালয়েশিয়ায় ফিরে আসে।

তারই ফাঁকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে মাস্টারমাইন্ড মিজানের বহু অপকর্ম। আসলে সোলাইমান টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়নি। আবারো ওই বাংলাদেশিদের কাছে টাকা নেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে।

মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের জাল ভিসা, পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই করতো এই মাস্টারমাইন্ড মিজান। জনপ্রতি লাখ টাকা নিয়ে এসব কাজ করত। বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ায় নিজের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্সের মাধ্যমে ধরাকে সরা জ্ঞান করে ফেলে মিজান।

প্রবাসীদের রক্তের বিনিময়ে সঞ্চিত অর্থ আত্মসাৎ করার কারণে অভিযোগের ভিওিতে গত ১৬ মে অভিবাসন বিভাগের অভিযানে ফের মিজানকে গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী হারুন আল-রশিদ বলেছেন, ‘আমরা অনেক এমন ঘটনা পেয়েছি, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা না- বুঝে ওই ভুয়া এজেন্টদের হাতে চার থেকে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত তুলে দিয়েছেন, তাদের আঙ্গুলের ছাপও নেয়া হয়েছে। কিন্তু এজেন্টরা ওই টাকা মেরে দেয়ায় তাদের আর কখনওই বৈধ হয়ে ওঠা হয়নি।’

মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘যেসব ভুয়া কোম্পানি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগেরই মালয়েশিয়ান ও মালয়েশিয়ান নাগরিকদের ছত্রছায়ায় মালিকানাও ছিল বাংলাদেশিদের।’

মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে শতশত অভিবাসীকে আটক করছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ায় থাকার পরও যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, এই ধর-পাকড় অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করছে। প্রতিনিয়ত গ্রেফতার করা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের।

২০১৬ এর ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সরকার রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু যে তিনটি ভেন্ডর কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়, তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ কিছু নকল এজেন্ট বা দালাল বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিরাট প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ