Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

১১ মাস ধরে মাল্টার মর্গে ইমরানের লাশ, গ্রহণ করতে চায় না পরিবার!

imranইমরান খান ওরফে সুজন। শরিয়তপুর জেলার এই যুবক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রচণ্ড তৃষ্ণায় নৌকায় তার মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে মারা যান আরো অনেকে। পরে তার লাশ রাখা হয় মাল্টার সরকারি মর্গে।

ইউরো মুদ্রায় নেশায় ছুটে যাওয়া এ পথ যে মোটেও সহজ নয়, তা হয়তো জেনেও তিনি মেনে নিয়েছিলেন পরিবারের কথা ভেবে। কিন্তু সে পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আত্মাহুতি দেওয়াই যে শেষ নয় তা হয়তো তিনি বুঝতে পারেননি। ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে দীর্ঘদিন পরিবারের লোকজন যখন তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না, তখন তারা ধরেই নিয়েছিলেন ইমরান আর বেঁচে নেই। কিন্তু প্রায় আট মাস পরে যখন তার মৃত্যুর খবরটি পরিবার পেলেন তখন তিনি মাল্টার মর্গে। কিন্তু এই মরদেহ দেশে ফেরাতে অতিরিক্ত খরচের কারণে লাশ দেশে নিতে চায় না তার পরিবার।

chardike-ad

হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার কেদারপুর গ্রামের। মৃত ইমরান খান ওরফে সুজন ওই গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে। লাশ দেশে আনতে পরিবারের এমন নির্মমতা মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীও।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দালালের মাধ্যমে ইউরোপের উদ্দেশে প্রথমে লিবিয়ায় যান ইমরান খান। সেখানে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার পর ওই বছরের ১৬ আগস্ট ছোট একটি নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি দেন তিনি। ৮৪ জন অবৈধ শ্রমিকের সঙ্গে ছোট্ট একটি নৌকায় তুলে দেওয়া হয় তাকে। প্রায় ৫ দিন খাবার-পানি ছাড়াই উত্তাল সমুদ্রের মাঝে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রচণ্ড ক্ষুধা আর পানির তৃষ্ণায় নৌকাতে তার মৃত্যু হয়। পরে সাগরে ভাসতে ভাসতে মাল্টার উপকূলে পৌঁছালে দেশটির কোস্ট গার্ড নৌকায় জীবিতদের উদ্ধার করে শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যায়। আর মৃতদের মাল্টার সরকারি মর্গে (কাস্টডি) রাখা হয়। পরে মাল্টায় তার লাশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে বিষয়টি দেশটিতে বসবাসরত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তারা দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ইমরান খানের লাশটিও শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

এরপর তার ঠিকানা অনুযায়ী প্রথমে যোগাযোগ করা হয় ইমরানের ইতালি প্রবাসী বোনের সঙ্গে। কিন্তু একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে বাংলাদেশে তার ভাই শোভন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা খরচের অজুহাত দেখিয়ে ইমরানের লাশ দেশে নিতে রাজি হননি।

মাল্টার আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ইমরানের লাশটি দেশে পাঠাতে হলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি তার লাশ দেশে পাঠানোর জন্য। ইতোমধ্যে সকল প্রক্রিয়া শেষ করেছি। এ মাসের মধ্যেই ইমরান খানের লাশটি বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মাল্টা আওয়ামী লীগ নেতারা আরো জানান, দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় মরদেহ পাঠানোর প্রক্রিয়া বেশ জটিল। মাল্টায় দূতাবাস থাকলে ইমরান খানের মরদেহ দেশে পাঠাতে এত ভোগান্তি হতো না। মাল্টার সকল কার্যক্রম গ্রিস থেকে সম্পন্ন হয় বলে এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া।

প্রসঙ্গত, শুধু ইমরান খান নয়, তার মতো হাজারো বেকার যুবক পাড়ি দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর পথ। কিন্তু এ পথ যে মোটেও সহজ নয়, তা তারা হয়তো জেনে পাড়ি দিচ্ছেন আবার অনেকেই না জেনে দিচ্ছেন।

ইউরোস্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর ইউরোপে ঢুকছে প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যাদের একটি অংশ এই নৌকা ডুবে মাঝ সাগরে প্রাণ হারান। পরে তাদের মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন দেশে জটিলতা তৈরি হয়। অনেকের সন্ধান জানা গেলেও খরচের কারণে তাদের পরিবার মরদেহ দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানান।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৬ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন। এভাবে সাগরপথে আসতে গিয়ে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ প্রাণও হারিয়েছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে বাংলাদেশি।