Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

china-muslimপ্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চীনের হুবেই প্রদেশে মৃত্যুর মিছিলে বৃহস্পতিবার যোগ হয়েছে আরও ১১৬ জন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮৩ জনে। নতুন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও চার হাজার ৮২৩ জন। সবমিলিয়ে এ প্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯৮৬ জনে।

তবে চীন সরকার করোনা বিষয়ে হুবেইসহ অন্যান্য প্রদেশকে গুরুত্ব দিলেও গুরুত্বই দিচ্ছে না জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় উইঘুরদের বিষয়ে। সেখানে বন্দি থাকা ১০ লক্ষাধিক মুসলিম করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

chardike-ad

এ পর্যন্ত চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে যে সংখ্যা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখানো হয়েছে প্রদেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে তুর্কিভাষী মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের বসবাস।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য বলছে, হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পর জিনজিয়াং প্রদেশে ৫৫ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মারা যাওয়ার কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। সেখানে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ইতোমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

chin-coronaগত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে চীনে মহামারি আকার ধারণ করে এই ভাইরাস। ভাইরাসটি চীনের ৩১ প্রাদেশিক পর্যায়ের অঞ্চল ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং প্রাণহানি বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল বৃহস্পতিবার উহানে মারা গেছে ১১৬ জন। এতে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৮০-তে।

তবে উইঘুর প্রতিনিধিরা বলছেন, তারা বিতর্কিত এ বন্দিশালায় দ্রুত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। আর প্রদেশটিতে এ রোগ ছড়িয়ে যথেষ্ট কারণও রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে। হাঁচি, কাশি এমনকি করমর্দনের মাধ্যমেও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে এ রোগ।

জিনজিয়াং প্রদেশের বিতর্কিত বন্দিশালায় যথেষ্ট নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিম। সেখানে জীবাণু বিনাশকারী সাবান ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় এখানে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমদের আটকে রেখেছে চীন সরকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, গণকারাগারে বন্দিদের আটকে রেখে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বিভিন্ন এনজিও ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘আসলে সেখানে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষ খুব কমই জানতে পারছে।’ তবে বেইজিং দাবি করেছে, ক্যাম্পগুলো আসলে প্রশিক্ষণাগার। আর সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এ ধরনের প্রশিক্ষণাগার থাকা জরুরি।

উইঘুর সম্প্রদায়ভুক্ত ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী দিলনুর রেইহান বলেছেন, ‘উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকরা কঠিন বিপদের সম্মুখিন। করোনাভাইরাস প্রাদুভার্বের মধ্যেই আমাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে বসবাস করছে। আমরা জানি না তারা পর্যাপ্ত খাদ্য-পানি পাচ্ছে কি না বা তাদের যথেষ্ট মাস্ক আছে কি না।’

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা যাতে উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপরে বিস্তার না করে সেখানে বন্দিশালাগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ৩ হাজারের অধিক ব্যক্তি। চেঞ্জ.অর্গ নামের একটি পিটিশন ওয়েবসাইটে তারা এ দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাসথ্রেথইনদ্যক্যাম্প, ডব্লিউএইচও২ইউরুমকি হ্যাশট্যাগ দিয়ে ক্যাম্পেইন করে জিনজিয়াংয়ে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বন্দিশালাগুলোতে শতশত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানানো পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে পারব না। উহানে করোনাভাইরাস যেভাবে ছোবল হেনেছে তাতে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারছি যে, আমরা যদি এখনই সোচ্চার না হই তাহলে ক্যাম্পগুলোতে কয়েক লাখ লোক আক্রান্ত হয়ে যাবে।

এসব বন্দিশালায় আটকদের সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না তা সেখানকার আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের কাছে জানার চেষ্টা করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

চীনের বাইরে বিশ্বে উইঘুর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করা দ্য ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস (ডব্লিউইউনিসি) বলেছে, এটা খুব আতঙ্কের যে, জিনজিয়াং প্রদেশে করোনাভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে যদি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে এখানে বিরাট এক গোষ্ঠী আক্রমণের শিকার হবে।

সূত্র : আল জাজিরা