Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবল তারকা

সিউল, ২৩ মে ২০১৪:

আর মাত্র কদিন পর ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে বসতে যাচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপের ২০তম আসর। ১২ জুন ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা ওঠবে ‘গ্রেটেস্ট শো অব দ্য আর্থের’। ইতোমধ্যে সর্বাধিক ৫টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে স্বাগিতক দেশ ব্রাজিল। এবারও হোম গ্রাউন্ডে শিরোপার জন্য ফেভারিট ধরা হচ্ছে নেইমারের দলকে।

chardike-ad

다운로드 (2)যুগে যুগে বিশ্ব ফুটবলকে ব্রাজিলের শাসন করার নেপথ্যে রয়েছে তাদের ফুটবল তারকাদের উত্থান। যাদের ফুটবল মেধার কথা এখনো স্মরণ করে ফুটবল প্রেমীরা। সাম্বা বালকদের দেশের সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার সম্পর্কে বাসস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে কিছ কিছু তথ্য।

১০. রবার্তো রিভেলিনো (১৯৬৫-৭৮, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৯২টি, গোল ২৬টি) : স্বাগতিক ব্রাজিলের হয়ে যারা ফুটবল বিশ্বে আলো ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ১০ অবস্থানে রয়েছে এই ফুটবল তারকা। নিখুত পাস, সুক্ষ ফুটবল শৈলী এবং ফ্রি-কিকের জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি। ক্লাব ফুটবলে তিনি ক্যারিয়ারের সর্বাধিক সময় কাটিয়েছেন কোরিয়েন্থিয়ান্সের হয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৩ সালে তিনি যোগ দেন ফ্লুমিনেন্সে। রিও ডি জেনিরোর ওই ক্লাবে তিনি ৫টি সফল মৌসুম কাটিয়েছেন। পরপর জয় করেছেন লীগ শিরোপা। যা ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সেরা সাফল্যের একটি হিসেবে আজীবন লিখিত থাকবে।

বিশ্ব ফুটবলে মুখ্য ভুমিকা রেখে তিনি মুগ্ধ করেছেন বিশ্ববাসীকে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের দলে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অনেকে ব্রাজিলের ওই দলটিকে সর্বকালের সেরা দল হিসেবেও বিবেচনা করে থাকেন। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ওই টুর্ণামেন্টে যোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে টুর্ণামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন তিনি। সেবার শিরোপা জয়ের পর ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালের শিরোপাও ঘরে তোলে ব্রাজিল।

৯. জাইরজিনহো (১৯৬৪-৮২, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৮১টি, গোল ৩৩টি) : ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আরেক নায়ক। তিনি ব্রাজিল দলে যোগ দিয়ে প্রমাণ করেন কোন কিছুই অসম্ভব নয়। গারিচ্চাসের দলের সফলতার নেপথ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম মুছে দেন ক্লাব ও দেশের মধ্যে শূন্যতার দেয়াল। তিনি বোটাফোগের আইডল হিসেবে অংশ নেন ৪০০টিরও বেশি ম্যাচে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিটি ম্যাচেই গোল করার এক অনন্য নজীর সৃষ্টি করেন এই ওয়েঙ্গার। যেটি তাকে আজীবন স্মরণীয় করে রাখবে। তার পারফর্মেন্সের কল্যাণে ওই আসরে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ওই টুর্ণামেন্ট তিনি সাত গোল করেন। চার বছর পর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তার করা দুই গোলে ভর করে সেমি-ফাইানালে পৌঁছে যায় ব্রাজিল।

৮. সক্রেটিস (১৯৭০-৮৬, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৬০টি, গোল ২২টি): তিনি ছিলেন ব্রাজিল দলের একজন অতৃপ্ত মহানায়ক। দীর্ঘদেহী এবং রুচিশীল এই মিডফিল্ডার ১৯৮২ সালে জিকো, ফ্যালকাও ও ইডরকে নিয়ে এমন এক মধ্যমাঠ সৃষ্টি করেছিলেন যা ছিল এক অর্থে ভয়ঙ্কর। অধিনায়ক হিসেবে তিনি অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শনের পরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে জয় করতে পারেননি বিশ্বকাপের শিরোপা। বৈশিষ্ট্যমন্ডিত দড়ি ও মাথায় ব্যান্ড পরে তিনি নিজেকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ভিন্নমাত্রার এক উচ্চতায়। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং দু’টি গোল করেন। ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও লাভ করেন সক্রেটিস।

৭. কাফু (১৯৯০-২০০৬, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ১৪২টি, গোল ৫টি) : ব্রাজিলের হয়ে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেয়া সবচেয়ো স্পেশাল খেলোয়াড় হচ্ছেন কাফু। তিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে ১৪২বার জাতীয় দলের পোশাক জড়িয়েছেন গায়ে। এতেই তার দক্ষতার প্রমাণ মিলে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে কাফু হচ্ছেন একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি আলাদা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার নজীর স্থাপন করেছেন। ক্লান্তিহীন এই রাইট ব্যাক পরপর ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ব্রাজিলের ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী দলেরও গর্বিত সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে দলের হয়ে তিনি দুই দফা কোপা দেল রে ও কনফেডারেশন কাপের শিরোপা জয় করেছেন। ক্লাব পর্যায়ে তিনি ব্রাজিলের ঘরোয়া শিরোপা জয়ের পাশাপাশি ইতালীতেও শিরোপা জিতেছেন। সেই সঙ্গে দুই দফা কোপা লিবার্টাডোরেস, একবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও কাপ জয় করেছেন। এসব অর্জন ফুটবলের ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণতা দিয়েছে।

১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কাফু ২১টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছেন। তন্মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ১৬টি ম্যাচে জয়লাভ করেছেন। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আমেরিকের বর্ষসেরা ফুটবলের খেতাব লাভ করেন কাফু।

৬. রোনালদিনহো (১৯৯৯-বর্তমান, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৯৭টি, গোল ৩৩টি) : সেরা সময়ে ফুটবল ইতিহাসের খুব কম সংখ্যক খেলোয়াড় রয়েছে যারা রোনালদিনহোর সমকক্ষ দাবী করতে পারেন। তার কৌশল ও আলতো পায়ে বলের নিয়ন্ত্রণ দর্শকদের বিমোহিত করে। পায়ের কারুকাজে সফল সামাপ্তিতে তিনি সামর্থ্যরে চেয়েও বেশি পারঙ্গম। ২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের প্রধান নায়ক ছিলেন তিনি। চার বছর পর ফের দলকে ফাইনালে পৌঁছে দিলেও সফল সমাপ্তি ঘটাতে পারেননি।

ক্লাব পর্যায়ে বার্সেলোনায় খেলার সময় তিনি ছিলেন নিখুত এক বিশ্বসেরা ফুটবলার। পরপর তিনি ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব অর্জন করেন। অতি সম্প্রতি তিনি ২০১৩ সালের কোপা লিবারটাডোরস ও নতুন করে রাইজিং সাউথ আমেরিকান ফুটবলার অব দ্য ইয়ার খেতাবে ভুষিত হয়েছেন।

৫. রোমারিও (১৯৮৭-২০০৫, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৭০টি, গোল ৫৫টি) : ‘গোল এলাকার জিনিয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করা যায় রোমারিওকে। কিংবদন্তী জন ক্রুইফ ও রোমারিওকে সবচেয়ে প্রতিথজশা ও বস্তুনিষ্ঠ স্ট্রাইকার হিসেবে মনে করা হয়। ক্লাব পর্যায়ে তাকে এখনো সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বার্সেলোনার হয়ে লা লীগা শিরোপা জয়ের পাশাপাশি পিএসবি এনডোভানের হয়ে তিনবার জয় করেছেন ইরাডিভাইস শিরোপা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি দুইবার কোপা দেল রে শিরোপা এবং ১৯৯৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। ব্যক্তিগতভাবে ১৯৯৪ সালে তিনি ফিফা বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় এবং ২০০০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কাল লাভ করেন।

৪. জিকো (১৯৭৬-৮৬, আন্তর্জাতিকম্যাচ ৭১টি, গোল ৪৮টি): আইএফএফএইচএস-এর তালিকায় বিংশ শতাব্দির অষ্টম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জিকোকে। অসাধারণ পাস ও ফ্রি-কীকের জন্য তিনি বেশি নাম কামিয়েছেন। তিনি ছিলেন খুবই বিপজ্জনক ফিনিশার ও ক্যারিয়ার শেষ করেছে ক্লাব পর্যায়ের ৭০০ ম্যাচে ৫০০টি গোল করে। ব্রাজিলের জাতীয় দলের হয়ে ৭১টি ম্যাচে অংশ নিয়ে তিনি গোল করেছেন ৪৮টি। যা তাকে দেশটির চতুর্থ সেরা গোলদাতার আসনে বসিয়েছে। ১৯৮২ সালসহ তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিলেও শিরোপা একবারের জন্য জোটেনি জিকোর ভাগ্যে। তবে ব্যক্তিগত সুনাম অর্জনে কোন ঘাটতি ছিল না তার। তিনবার দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব লাভ করেছেন জিকো।

৩. রোনালদো (১৯৯৪-২০১১, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৯৮, গোল ৬২): অনেকে মনে করেন এ পর্যন্ত যারা ফুবল খেলেছেন তাদের মধ্যে সেরার আসন অলংকৃত করার যোগ্যতা রয়েছে পরিপুর্নভাবে ফিটে থাকা রোনালদো। তবে এটিও দু;খজনকভাবে মানতে হচ্ছে যে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়েই ইনজুরির সঙ্গে কাটিয়েছেন তিনি। তারপরও তিনি ক্যারিয়ারে তিনবার ফিফা বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব অর্জন করেছেন।

‘দি ফেনোম্যান’ খেতাবের অধিকারী এই ব্রাজিলীয় ক্লাব পর্যায়ে বিদ্যুৎগতির পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছেন। যা তাকে পৌঁছে দিয়েছিল ব্রাজিলের ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী স্কোয়াডে। চার বছর পর দলে তার অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা অবধারীত হয়ে ওঠে। তবে ১৯৯৮ সালের আসরে তিনি দলের অলংকার হিসেবে কাটিয়েছেন। কারণ ফাইনালের আগের রাতে তিনি ইনজুরীরর কবলে পড়ে যান।

২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ী দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন রোনালদো। চতুর্থ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে তিনি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটি দখল করেন। ১৫তম গোল করে তিনি টপকে যান গার্ড মুলারকে। শুধু তাই নয় ৬২ গোল করে ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতাদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করেন রোনালদো।

২. গ্যারিনচা (১৯৫৫-৬৬, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৫০টি, গোল ১২টি) : ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে যদি পেলের চেয়ে সেরা হিসেবে কাউকে মনোনীত করা হতো তাহলে সেই জায়গাটি লাভ করতেন এই ফুটবল কিংবদন্তী। ফুটবল ইতিহাসে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও বিপজ্জনক খেলোয়াড় হিসেবে। জন্মের সময় শারিরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পৃথিবীর আলোতে আসা এই তারকা নিজেকে সর্বকালের সেরা তারকাদের কাতারে ঠিকই পৌঁছে দিয়েছেন। মাঠের বাইরের সমস্যা কখনো তার মাঠের সফলতায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সেখানে বোটাফোগা ও ব্রাজিলের আইডল হিসেবেই থেকেছেন তিনি। ফুটবলের ইতিহাসে সেরা ড্রিবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা গ্যারিনচা দু’টি বিশ্বকাপ শিরোপাসহ জয় করেছেন ক্লাব পর্যায়েরও শিরোপা।

বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের তালিকায় সপ্তম স্থান লাভ করা এই ব্রাজিলীয় তার ক্যারিয়ারের ৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে একবার মাত্র হারের মুখ দেখেছেন। আর সেই হারটি এসেছিল জাতীয় দলের হয়ে তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিতে।

১. পেলে (১৯৫৭-৭১, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৯২টি, গোল ৭৭টি) : ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন পেলে। বর্ণিল ক্যারিয়ারে পেলে নিজেকে এমন এক রেকর্ডে পৌঁছে দিয়েছেন যেটি এখনো পর্যন্ত আর কেউ ভাঙ্গতে পারেনি। একই সঙ্গে তিনি ফুটবলকেও পৌঁছে দেন অনন্য এক উচ্চতায়। ফুটবল ক্যারিয়ারে তার ১২৮১ গোলের রেকর্ডটি ফিফার অফিসিয়াল রেকর্ডের শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে। আর তিনিই হলেন ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের মেডেল লাভ করেছেন। তন্মধ্যে দু’টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন পেলে নিজে।

কৈশোর বয়সে বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে পা রাখা এই ফুটবলার ১৯৭০ সালে নিজেকে বসিয়ে দেন ফুটবলের রাজার আসনে। ক্লাব পর্যায়ে তিনি ৪০টির ও বেশি শিরোপা লাভ করেছেন। যার বেশিরভাগই এসেছে স্যান্টোস ক্লাবের হয়ে। তার অবস্থানের সময় ওই ক্লাবটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে মোহনীয় ক্লাব।