Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নতুন শঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা

probashiকরোনাভাইরাস মহামারির জের ধরে ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। আবার অনেকে কাজ না পেয়ে বিদেশেই মানবেতর জীবন যাপন করছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতিতেও।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, ইতোমধ্যেই প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং আরও প্রবাসীকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি তালিকা দিয়েছে সৌদি আরব। তিনি বলছেন, সৌদি আরবসহ তেল নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি আগের মতো ভবিষ্যতে আর নাও থাকতে পারে। তাই শ্রমিকদের বিকল্প শ্রমবাজারে পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা।

chardike-ad

“যেসব দেশে শ্রমিক আছে আমরা তাদের বলেছি যে এসব লোকেরা যেন চাকুরি না হারায় কিংবা খাদ্য ও চিকিৎসার সংকটে যেন না পড়ে। আর প্রবাসীদের বলেছি তারা যেন যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। তবে এটা সত্য যে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম পড়ে গেছে।

”অনেক দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাবে। তখন যাতে শ্রমিকরা অন্য দেশে যেতে পারেন সেজন্য অন্যান্য দেশে এভিনিউ খুঁজছি যে কোথায় তাদের পাঠানো যেতে পারে,” বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন যারা ইতোমধ্যেই এসেছেন ও সামনে আসবেন তাদের জন্যও সরকারের দিক থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।

“যাতে তারা কর্মক্ষম থাকতে পারেন সেজন্য লোন দেয়া হবে। স্কিল ট্রেনিং দিবো যাতে নিজেরা কাজ পান বা উদ্যোক্তা হতে পারেন। তবে আপদ সবসময় থাকবে না। তখন অবস্থার পরিবর্তন হবে ও হয়তো তারা কাজ পাবেন”।

প্রায় আড়াই মাস আগে সৌদি আরব থেকে এসে আর সেখানে ফিরে যেতে পারেনি আবির মোড়ল। তিনি বলছেন তার ছুটির শেষ পর্যায়ে এসে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর কাজে ফেরা হয়নি তার।

আবির মোড়লের মতো অন্তত দু লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে ফিরে এসেছেন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে।

দুনিয়া জুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ২১ মার্চ থেকে সৌদি আরবসহ দশটি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে এক মাসে দেশে ফিরেছেন চার লাখ ৪০ হাজার মানুষ।

অভিবাসন নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের হিসেবে এর অর্ধেকই ছিলেন প্রবাসী শ্রমিক, যারা পরবর্তীতে আর যেতে পারেননি বা সময়মত ফিরতে ব্যর্থ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন। কিন্তু যারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থেকে গেছেন তাদের অনেকেই লকডাউন শুরুর পর কাজ হারিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।

বিশেষ করে যারা ফ্রি ভিসায় গিয়েছিলেন তাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ, বলছেন সৌদি আরবে একটি কোম্পানিতে কাজ করা নুর ইসলাম শেখ। তিনি বলছেন অনেকেই কাজ হারিয়েছেন এবং তার আশংকা সামনে এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বিশ্বের ১৬৯টি দেশে যে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কাজ করে, তাদের ৭৫ ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের এবং তারাই মূলত রেমিটেন্সের বড় অংশের যোগান দেন।

এবার করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতেই ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যারা জের ধরে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পরেও ফেরত আনতে হয়েছে প্রায় চার হাজার শ্রমিক। এছাড়া চলতি মাস নাগাদ আরও ২৯ হাজার শ্রমিককে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু এ অবস্থা যদি চলতেই থাকে তাহলে পাল্টে যেতে পারে দেশের শ্রমবাজারের সার্বিক পরিস্থিতিই।

শুধু সৌদি আরবই নয়, ওমান, কাতারসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে শ্রমিকদের ফেরত আসার তালিকা বেশ লম্বা। এমনকি মালয়েশিয়াতেও সংকুচিত হচ্ছে শ্রমিকদের জায়গা।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারির জের ধরে আসা দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রবাসীদের জন্য ইতোমধ্যেই ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে।

প্রবাসীদের জন্য দূতাবাসগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ দেয়া হয়েছে। আবার যারা দেশে ফিরেছেন বা ফিরে আসবেন তারা যেন সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে কাজ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। বিবিসি।