বেপরোয়া গতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ঋণ নিয়ে অধিকাংশ সময়ে দেশ পরিচালনা করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে যে কোনো সরকারের চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারই অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ঋণের জন্য নির্ভরশীল ছিল।
২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ১ লাখ ৩২ হাজার ২২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এসব ছাপানো টাকাও লুটপাট করার অভিযোগ আছে।
এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন বাড়েনি। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে, যা বিশেষ করে স্বল্প-আয়ের মানুষকে নিষ্পেষিত করেছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে দলটি টানা ১৫ বছর ৭ মাস ক্ষমতায় ছিল। ওই সময়ে সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ব্যাংক লুটের মাধ্যমে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। সরকারের মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ ঘনিষ্ঠ লোকজন টাকা আÍসাৎ করে পাচার করেছে.
এর মধ্যে ব্যাংকে থাকা জনগণের আমানত যেমন রয়েছে, তেমনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় নেওয়া ঋণও রয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘসময়ের ক্ষমতার অবসান ঘটে। কিন্তু অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা এখন আরও প্রকট হয়েছে, যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে নতুন সরকারকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ২৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার এসব ঋণ নিয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে টানা তারাই ক্ষমতায় থাকে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ হিসাবে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ নিয়েছে, সেগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত ঋণ হিসাবে চিহ্নিত। ৩১ জুলাই পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ হিসাবে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই গত সাড়ে ১৫ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ২২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে দেশেজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বা জিডিপির আকারও বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ঋণ বেড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। ওই সময়ে সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে ৫ দশমিক ২৭ গুণ। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ ও বৈদেশিক ঋণও বেড়েছে।