Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রমজানে স্বাস্থ্য সচেতনতা

সিউল, ৩০ জুন ২০১৪:

রমজানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী

chardike-ad

আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে রমজানে যে খাদ্যাভ্যাস লক্ষ করা যায়, তা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ সময়ে খাবারের প্রধান পর্যায় দুটি- সেহরি ও ইফতার। আমাদের দেশে সেহরি ও ইফতারের অধিকাংশ খাবারই হচ্ছে চর্বিসমৃদ্ধ এবং তেলে ভাজা। সেহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় রাখা হয় না। কিন্তু এসব দিকে নজর দিতে হবে।

070313-healthy-ramadan__largeস্বাভাবিকভাবে যে কোনো ধরনের খাবারই সেহরিতে খাওয়া যায়; তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবারটা যেন সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ভাত বাঙালির মুখ্য খাবার। তাই সেহরিতে অবশ্যই সাদা ভাত রাখবেন। তবে ভাতের সঙ্গে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, গোশত ও ডিম। খরচ কমাতে চাইলে ভাতের সঙ্গে শুধু ডিম ও ডাল। ডাল উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই। সেহরির খাবার তালিকায় যে কোনো একটি সবজি থাকা ভালো। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পেঁপে, করলা, আলু, টমেটো এর কয়েকটি বা যে কোনো একটি রাখলে চলবে। পাকস্থলীতে উত্তেজনা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে, এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়।

ইফতার পর্বে উত্তেজক খাবার একেবারেই বর্জন করতে হবে। ইফতার শুরু করবেন শরবত দিয়ে। তবে শরবতে কৃত্রিম রঙ মেশাবেন না। এ রঙে থাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, যেসব অবশ্যই পরিহার করবেন। যে কোনো একটি ফল খাবেন ইফতারে। ফল থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ, যা আপনাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়ে। দই, চিড়া ও কলা খেলে ভালো।

প্রচলিত তেলে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া খাবারগুলো পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যার মধ্যে থাকে বেনজোপাইরিন। এটা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। খেজুর সেই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।

রোজায় একটানা দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে। ফলে দুর্বলতা, মাথাঘোরা, ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া, অল্পতেই ঘেমে যাওয়া, শরীরে কাঁপুনি, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে, এমনকি অচেতনও হয়ে যেতে পারেন। ডায়াবেটিক হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে। রমজানের সময় রোজাদার ডায়াবেটিক রোগীদের ওষুধের মাত্রা ও সেবন বা প্রয়োগের সময় সেহরি ও ইফতারের সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সমন্বয় করে নিতে হবে। ডায়াবেটিকে আক্রান্ত নন, এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের ঘাটতি এড়াতে সেহরি খেতে হবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে রক্তে গ্লুুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। রমজানে অন্যতম সাধারণ সমস্যা হচ্ছে মাথাব্যথা। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে যেমন মাথাব্যথা হয়, তেমনি পানিশূন্যতার জন্যও মাথাব্যথা হতে পারে। দিনের শেষ ভাগে বা ইফতারের পরপরই অনেকের মাথাব্যথা শুরু হয়। মাথাব্যথা তীব্র হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমানো যায়। তবে মাথাব্যথা প্রতিরোধে সেহরি ও ইফতারের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

অনেকেরই পাকস্থলীতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পেট ব্যথা, ফাঁপা, জ্বালাপোড়া, গুড়গুড় করা, বদহজম, গ্যাস হওয়া প্রভৃতি সমস্যা প্রায়ই ঘটে। পেটের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এসব খাবার বর্জন করে সেহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

অনুলিখন : ইমদাদুল হক, আলোকিত বাংলাদেশ।