Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজ শুরু আগামী মাসে

প্রায় তিন বছর পর অবশেষে শুরু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের মতে, আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ শুরু হবে এর কাজ। যদিও নির্মাণ শুরুর আগেই বিতর্ক উঠছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মিতব্য এক্সপ্রেসওয়েটি নিয়ে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে বিনামূল্যে প্রায় ১২৮ একর জমি নেয়া হচ্ছে। আবার ভায়াবিলিটি গ্যাপের নামে নির্মাণ ব্যয়ের ২৭ শতাংশ দেয়া হচ্ছে সরকারের তহবিল থেকে। এর পরও এর কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্মাণ ব্যয় নিয়ে বিতর্কের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। আবার বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তারাও ব্যয় কমানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

chardike-ad

ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডের (ভিজিএফ) ২ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা নিয়ে এরই মধ্যে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। ভিজিএফের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য প্রকল্পের ডিজাইন পরামর্শক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পক্ষ থেকে সেতু বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস বণিক বার্তাকে বলেন, পিপিপি প্রকল্পে ভিজিএফ বহুল প্রচলিত। প্রকল্পের বিনিয়োগ ঝুঁকি হ্রাস করতে বিভিন্ন দেশে এটি দেয়া হয়। তাই ভিজিএফ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ সরবরাহের কথা রয়েছে। বাকি ২৭ শতাংশ ভিজিএফ সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হবে।

২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জুলাইয়ে কাজ শুরুর কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আর হয়নি। নকশা ও চুক্তি সংশোধনের পর নির্মাণকাজ শুরুর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রেলওয়ের ১২৮ দশমিক ৩০ একর জমি এরই মধ্যে সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের সময় সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের জন্য কোনো বিনিময় মূল্য পায়নি রেলওয়ে। পাশাপাশি বেসরকারি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১২৮ কোটি টাকা জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেয়া হয়েছে।

নির্মাণকাজ শুরুর জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিআরসিসি) সঙ্গে চুক্তি করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকায় অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। নির্মাণ যন্ত্রপাতিও দেশে আনার কাজ চলছে।

download (5)সেতু বিভাগের তথ্যমতে, বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। আর ভিজিএফ হিসেবে ২ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা দেবে সরকার। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এটিও বহন করবে সরকার। সব মিলিয়ে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ে ৪৩১ কোটি টাকা, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বাদে বর্তমানে বিশ্বে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ২ কোটি ডলার বা ১৬০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৫ কিলোমিটার সংযোগ অংশসহ ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হওয়ার কথা ৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় যোগ করলে মোট ব্যয় ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকার কথা।

সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এর ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে পিপিপিতে সরকারের কোনো ব্যয় নেই উল্লেখ করে তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ব্যক্তিগত প্রভাবে প্রকল্পটি অনুমোদন করিয়ে নেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে ভিজিএফ নিয়ে। সরকারের কোনো বিনিয়োগ নেই বলা হলেও ভিজিএফের আওতায় সরকারের তহবিল থেকে বিনিয়োগকারীকে নগদ অর্থ প্রদান করতে হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, নির্মাণ ব্যয়ে ২৭ শতাংশ অর্থ ভিজিএফ হিসেবে ছয় কিস্তিতে দেয়া হবে। নির্মাণ শুরুর দ্বিতীয় বছর থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে নগদে এ অর্থ প্রদান করবে সরকার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অন্তত ৫০ শতাংশ সামগ্রী বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিজিএফের অর্থ ব্যবহার করতে পারবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পে পরামর্শক ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলক বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ করা হলে তা কিছুটা কম পড়ত। তবে পিপিপি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ধারণা। এক্ষেত্রে টোলের হার ও টোল আদায়ের সময়সীমা উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া উচিত নয়।

উল্লেখ্য, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল ধরা হয়েছে মোটর গাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০, ছয় চাকার ট্রাকে ৫০০ আর ছয় চাকার বেশি ট্রাকের জন্য টোল পড়বে ৬২৫ টাকা। তবে তিন বছর পর পর টোলের হার সমন্বয় করা হবে। ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক ন্যূনতম ১৩ হাজার ৫০০ যানবাহন চলাচল করতে হবে। তা না হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হবে। বণিকবার্তা।